রেলে ছিনতাইকারী

নিরাপদ রেলভ্রমণ যেন ক্রমেই যাত্রীদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। রবিবার ভোরে দু’জন শিক্ষানবিশ প্রকৌশলী রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে গাজীপুর যাওয়ার পথে কয়েকজন ছিনতাইকারী চলন্ত ট্রেন থেকে তাদের ফেলে দেয়।
এতে দু’জন তারা হয়; একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যারা নিয়মিত রেলভ্রমণ করেন, তাদের অনেকের কাছেই যেন ঘটনাটি অশুভবার্তা বয়ে এনেছে। রেলে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে ইদানীং এক ধরনের সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীর আবির্ভাব ঘটেছে, যারা যাত্রী সেজে ট্রেনে ভ্রমণ করছে এবং সুযোগ বুঝে অস্ত্র ঠেকিয়ে যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করছে। ইতোপূর্বে এ ধরনের ঘটনা কয়েকবার ঘটলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের জন্য তেমন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তা না হলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কাছে চলন্ত ট্রেনে এমন হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা কীভাবে ঘটল? জানা গেছে, তুরাগ এক্সপ্রেস ট্রেনটি তেজগাঁও রেলস্টেশন অতিক্রমের পর একদল ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে ওই দু’জনের কাছ থেকে টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। দুই প্রকৌশলী বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা গলায় ফাঁস দিয়ে তাদের হত্যার চেষ্টা করে। এতে একজন অচেতন হয় পড়েন। এরপর ছিনতাইকারীরা দু’জনকেই ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। পরে পথচারীরা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
রেলে যেভাবে সন্ত্রাসের কালো ছায়া পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে অনেকেই ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অনেকের প্রশ্ন রেল যাত্রীদের জন্য যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই কেন? এক সময় বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি ট্রেনে পর্যাপ্ত সংখ্যক রেল পুলিশ থাকত; বিশেষ করে যাত্রীদের রাত্রীকালীন ভ্রমণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব ব্যবস্থাই নিতেন। অন্য সব গণপরিবহনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে রেল ভ্রমণ ছিল অনেক নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন। সেই নিরাপদ রেলভ্রমণ যেন এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশের অসংখ্য মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষ ভ্রমণের জন্য রেলকেই সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু চলন্ত ট্রেনে যেভাবে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে তাতে সাধারণ মানুষ অসহায় বোধ করছে।
রেলভাড়া বেড়েছে কিন্তু যাত্রীসেবার মান বাড়েনি ও যাত্রীদের নিরাপত্তাও পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। রেলের উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। প্রয়োজনে যাত্রীবাহী ট্রেনের বগিতে পুলিশী পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। রেলে ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান অপরিহার্য। এটা অবিলম্বে করা দরকার। তা না হলে মানুষ রেলভ্রমণের উৎসাহ হারাতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.