খালেদার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে, উল্টাপাল্টা বকছেন ॥ সাজেদা- বিজয়মঞ্চে আলোচনা

সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া একজন বিষধর কালসাপ। তিনি রাজাকার-আলবদর নামক বিষাক্ত সাপদের পুষেছেন। কিন্তু তিনি জানেন না, এদের কামড়েই তাঁর মৃত্যু হতে পারে। তাঁর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
সরকারের সাফল্য দেখে তিনি উল্টাপাল্টা বকছেন।’বুধবার রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত বিজয়মঞ্চে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাজেদা চৌধুরী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে সাপের সঙ্গে তুলনা করেছে। তিনি তো চোখে সাপ দেখবেনই, সাপ তো সাপকেই চেনে। তাঁর চারপাশেই তো ঘুরে বেড়াচ্ছে বিষাক্ত সাপেরা। সেসব সাপকেই তিনি লালন-পালন করছেন, কিন্তু তিনি জানেনই না এই বিষধর সাপের কামড়েই তাঁর মৃত্যু হতে পারে। তিনি খালেদা জিয়াকে ‘বিষাক্ত কালনাগিনী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগকে কখনও সাপের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে না, কেননা তারাই তো একাত্তর সালে সাপের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করেছিল। তারাই তো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে পাকিস্তান বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করেছিল।
আলোচনাসভায় ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিজয়মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু।
সাজেদা চৌধুরী বলেন, বিরোধী দল আমাদেরকে ভয় দেখায়, কিন্তু আমরা বলতে চাই কোন ভয়ে আমরা ভীত নই। আমাদের ওপরে আল্লাহ আছেন, তিনি যেদিন নিয়ে যাবেন সেদিন চলে যাব, তার আগে কারও দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে শহীদ হয়ে যাব। তিনি বলেন, তিনি জিয়ার নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনীতি করছেন, কিন্তু জিয়া যখন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তানে জেনারেলদের সঙ্গে ছিলেন। তাঁকে আনার জন্য জিয়া বার বার চেষ্টা করলেও তিনি আসেননি। এ এক নির্মম ইতিহাস। তিনি তো জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসেন নাই, তিনি কি করে এদেশের নেতৃত্ব দাবি করেন!’
তিনি আরও বলেন, এই ডিসেম্বরে যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে জাতি, সে সময় তিনি কি করছেন? এই মাস তো আমাদের আশার আলো, এ মাসেই আমরা উপলব্ধি করি বাঙালী সত্যিই কি চায়। তিনি এ বিজয়ের মাসে কি করেছেন? ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বাঙালী জাতির জন্য তাঁদের কি অবদান আছে জাতি তা জানতে চায়। যারা দেশের জন্য কাজ করছেন তারাই তো প্রকৃত দেশপ্রেমিক। এদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, বিজ্ঞানী সবাই দেশের কথা চিন্তা করে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি এদেশে যে বিধ্বংসী কর্মকা- চালাচ্ছে তা ধিক্কার জানায় জাতি।
তিনি ছাত্রলীগকে একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনা দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর প্রধান শক্তি এই ছাত্রলীগ। তারা ছাড়া আওয়ামী লীগ এক পাও এগোতে পারবে না। তাদের যে দেশপ্রেম রয়েছে তা জাতিকে উদ্দীপ্ত করে। যারা দেশের কথা ভাবে না, এর জন্য কাজ করে না দেশে তাদের কোন জায়গা নেই। তাদের দেশছাড়া করা হবে।
আলোচনাসভায় মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে এই বাংলা স্বাধীন হয়েছে, কোন সিপাহীর হুঁইসেলে তা মুক্ত হয় নাই। খালেদা জিয়া নিজেই একজন বিষধর কালনাগিনী। তাঁর ছোবলে আজ পুলিশ বাহিনী ক্ষতবিক্ষত, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা ক্ষতবিক্ষত, বাংলার কৃষক, শ্রমিক ক্ষতবিক্ষত। এই খালেদার ছোবলে বাংলার মানচিত্র রক্তাক্ত।
‘আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায় না’ খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে তিনি বলেন, রাজাকারের বিশ্বাসে আমাদের কিছু আসে যায় না। পাকিস্তানীরা আর রাজকাররা ছাড়া বাংলার কোন জনতা তাদের বিশ্বাস করে না। তিনি খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকতে বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আন্দোলনকে ভয় পায় না। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ আন্দোলন করতে জানে না। তারা কিসের আন্দোলন করেন? তাঁরা করেন ভাংচুর, লুটতরাজ আর ধ্বংসের আন্দোলন। এসব করে জনগণের মন জয় করা যায় না। তিনি বলেন, যে রকমভাবে একাত্তরে রাজাকার, জামায়াত, শিবিরকে আমরা পরাজিত করেছিলাম ঠিক সেভাবেই এবারও তাদের গডফাদার বিএনপিকেসহ পরাজিত করব।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের চার বছরের অর্জন নিয়ে জনগণের সামনে দাঁড়াব। আমরা অনেক ধৈর্য ও শৌর্য নিয়ে তাদের মোকাবিলা করছি। দেশ যখন উন্নয়ন আর অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন বোমা মেরে, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে, শিবির ক্যাডারদের ব্যবহার করে তার পেয়ারে গোলাম আযমকে রক্ষার জন্য মিশনে নেমেছেন। জাতিকে পঙ্গু করার মিশন নিয়ে তিনি রাজপথে নেমেছেন। আসলে তাঁর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের অর্জন দেখে তিনি ভয়ে কাবু হয়ে পড়েছেন। তিনি তাই আবোলতাবোল বকছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চায়, তারা মিথ্যা বলতে বলতে সত্যকে চাপা দিতে চায়। তারা যতই তর্জন-গর্জন করুক, স্বাধীন বিচার বিভাগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে আর তা রোধ করার কোন ক্ষমতা কারও নেই।
আলোচনাসভা শেষে সন্ধ্যায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মঞ্চের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

No comments

Powered by Blogger.