ইবির অচলাবস্থা আর কতদিন by আকতারুজ্জামান

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা চলছে চার মাস ধরে। অনেকের সম্মান শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে প্রায় পাঁচ মাস আগে। দু'মাসের মাথায় ফল প্রকাশের আগে ক্যাম্পাস অচল হয়ে যায়। এরপর চলে গেছে আরও চার মাস; কিন্তু ফল প্রকাশ হয়নি।
শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক ও প্রশাসনিক ধর্মঘটের কারণে তা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ভিসি, প্রো-ভিসির পদত্যাগ না হলে তাদের ফল প্রকাশ সম্ভব হবে না।
ফল প্রকাশ হলে অন্তত সম্মানের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির জন্য অনেকে আবেদন করতে পারত। অনেক পরিবার অভাব-অনটন, আর্থিক টানাপড়েন থেকে মুক্তি পেত। সবাই জানেন যে শিক্ষাজীবন শেষ, অনেকের কাছে ভবিষ্যৎ জীবন আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া স্বপ্নের। সবকিছুর মূলে রয়েছে বিলম্বে ফল প্রকাশ।
শিক্ষকদের আন্দোলন, সেশনজট, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবরের শিরোনাম ইত্যাদিতেও আমাদের সরকারের টনক নড়েনি। ক্যাম্পাস ছয় মাস বন্ধ থাকলে কী আসে-যায়! তবে ক্যাম্পাস সচলের দাবিতে একজন আত্মাহুতি দিলে হয়তো বা টনক নড়তে পারে! ছাত্রলীগ কর্মীদের আগুনে সিলেটের এমসি কলেজ পুড়ে গেলে শিক্ষামন্ত্রী কেঁদে ফেলেছিলেন। এতে তিনি মানবিক গুণসম্পন্ন একজন মানুষের পরিচয় দিয়েছিলেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তার মানবিকবোধ জাগ্রত হোক।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত অবস্থা আরও বেশি ভয়াবহ। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ভিসি প্রফেসর ড. এম আলাউদ্দিন, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. শাহজাহান আলীর অর্থবাণিজ্য, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির জেরে ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে প্রায় চার মাস ধরে। তাদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শিক্ষক সমিতি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষক গণহারে পদত্যাগ করেছেন। চার মাস ধরে শিক্ষকরা দুর্নীতিবাজদের প্রতিহত করতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আর দুর্নীতিবাজরা বহিরাগত সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের ক্ষত-বিক্ষত করে আহত করেছে। এতেও থেমে থাকেনি দুর্নীতিবাজ হটানো আন্দোলন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদী শিক্ষকরা প্রতিদিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। দুর্নীতিবাজ ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন শিক্ষকরা। কয়েক মাসব্যাপী বিভিন্ন আন্দোলনেও কর্তাব্যক্তিদের টনক না নড়ায় আন্দোলনরত শিক্ষকরা অনশন কর্মসূচিও পালন করেছেন। দুর্ভর্োগের শিকার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করছে প্রতিদিন। তারা আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর আক্তারুল ইসলামকে প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখার পর কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এসে উদ্ধার করেছেন। ভিসি, প্রো-ভিসি ক্যাম্পাসে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী তারা পদত্যাগ করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। পুরো ক্যাম্পাস অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যেই রাতে বোমার বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে ক্যাম্পাস। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভিভাবকহীন ক্যাম্পাসে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোনো মুহূর্তে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যেতে পারে। আর ছাত্র সংগঠনগুলো বিবাদে জড়িয়ে গেলে ক্যাম্পাসে লাশের মিছিলও শুরু হতে পারে।
মাত্র একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের এই অচলাবস্থা। বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ শতাধিক চূড়ান্ত পরীক্ষা। দীর্ঘদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী-শূন্য হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।
উধ্বতন কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিলে হয়তো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থী হুমকির মুখে পড়ত না। এখন তো থমকে গেছে সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তিচ্ছু প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনও। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীসহ ভর্তিচ্ছুরা চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কেবল সরকারের সুদৃষ্টিই পারে এ সংকট নিরসন করতে।
য়আকতারুজ্জামান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া
akterlink@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.