ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কত দূর by শাকির আহমেদ শোয়েব

মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া কি ফিলিস্তিনি শিশুদের পাপ? এক মুঠো ভাত আর একটু নিরাপদে বসবাসের চেষ্টা করাই কি ফিলিস্তিনি নাগরিকদের অপরাধ? ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত স্বীয় ভূমিতে স্বাধীনভাবে বসবাসের চেষ্টা ব্যতীত ফিলিস্তিনিদের আর কোন অপরাধ ছিল_ তা কোনো সভ্য জাতি বলতে পারবে না।
১৯৪৮ সালে বেলফোর চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের স্বীয় জন্মভূমিতে উড়ে এসে জুড়ে বসে সাম্রাজ্যবাদীদের উচ্ছিষ্টভোগী উগ্র জাতীয়তাবাদী রক্তপিপাসু রাষ্ট্র ইসরায়েল। শান্তিপ্রিয় মধ্যপ্রাচ্যে ছড়ায় অশান্তির আগুন। সাম্রাজ্যবাদী মোড়লদের প্রত্যক্ষ উস্কানিতে ইসরায়েল নির্বিচারে গুলি করে অনেক নিরীহ ও বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। প্রতিদিন ফিলিস্তিনি শিশু অনাথ করছে। বিধবা করছে শত শত ফিলিস্তিনি নারীকে। ২০০৮ সালে ইসরায়েল অপারেশন কার্ডলিস্ট নামে ২৩ দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে ১১৭৯ জন গাজাবাসীকে হত্যা করে। তাদের ৮২ ভাগই ছিল বেসামরিক লোক। শুধু তাতেই ক্ষান্ত নয়। ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান শহর গাজাকে অবৈধভাবে অবরোধ করে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মানব নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে।
দুজাইলে গণহত্যার রাজনৈতিক অজুহাতে ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে মৃত্যুদ দিয়েছিল। কিন্তু ইরাক, আফগানিস্তানে লাখ লাখ বেসামরিক লোককে হত্যা করা হলে হত্যার মদদদাতা বুশ-বেল্গয়ারসহ সাম্রাজ্যবাদী মোড়লদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তলব করা বা শাস্তি দেওয়া দূরের কথা বরং এসব ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডকে 'জি হুজুর' বলে সম্বোধন করছে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে গড়ে ওঠা এসব আন্তর্জাতিক সংগঠনও নিশ্চুপ। পশ্চিমাদের হুমকি-ধমকিতে ওঠে আর বসে মেরুদ হীন এসব আন্তর্জাতিক সংগঠন।
নভেম্বর মাসে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর যে নগ্ন হামলা শুরু করেছিল, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি নীল নকশার বাস্তবায়ন। মজলুম ফিলিস্তিনিদের বুকফাটা আর্তনাদ আইসিসির দোরগোড়ায় পেঁৗছাতে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যখন গত মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পর্যবেক্ষক হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে দাবি জানানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন, ঠিক তখনই ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যার জন্য হামাসপ্রধান আহমদ সাইদ খলিল আল জাবারিকে হত্যা করে।
জাতিসংঘ সদস্যদের ৯০ ভাগ শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন হিসেবে দেখতে চায়, যা ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে প্রমাণিত। কিন্তু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যের লেবাসধারী সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণেই হয়তো ঝুলে থাকবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি। কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরায়েলি যুদ্ধপরাধের বিচার চাওয়ার জন্য ফিলিস্তিনের পর্যবেক্ষক হিসেবে মর্যাদা লাভ করাকে যে যুক্তরাষ্ট্র 'মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার পথে বাধা' হিসেবে উল্লেখ করেছে, সে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতির কল্পনা বাতুলতা বৈকি।
যখন ইসরায়েলি নরপিশাচরা নিরীহ ও বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো বোমা নিক্ষেপ করে, তখন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা আত্মরক্ষার জন্য ইসরায়েলি কামান, ট্যাঙ্ক ও মেশিনগান লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়ে মারে। ইসরায়েলি হায়েনাদের হাতে সম্ভ্রম লুটের ভয়ে নিরুপায় ফিলিস্তিনি নারীরা যখন আত্মঘাতী পথ বেছে নেন, তখন পাশ্চাত্যের মিডিয়াগুলো ফিলিস্তিনিদের জঙ্গি হিসেবে আখ্যা দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে। আত্মরক্ষার জন্য প্রতিপক্ষের ড্রোন কামানের দিকে ইট-পাথর ছুড়ে মারা যদি জঙ্গিবাদ হয়, তবে সে জঙ্গিবাদের অপরাধ একা ফিলিস্তিনিদের নয়, বরং সে অপরাধ সভ্যতার, অপরাধ মানবতার।
য়শাকির আহমেদ শোয়েব শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.