বেশি বিদ্যা ভয়ঙ্করী by শাহনেওয়াজ বিপল্গব

্তুঅল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী' বলে একটা কথা চালু আছে আমাদের দেশে। কথাটার মানে হচ্ছে : অল্পবিদ্যাধারী বা অল্পশিক্ষিত লোকদের প্রজ্ঞা বা বিচার-বিবেচনাবোধ অধিক শিক্ষিত বা বেশি বিদ্যাধারী ব্যক্তির প্রজ্ঞা বা বিচার-বিবেচনাবোধের মতো অতটা প্রখর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ফলে অল্পবিদ্যার লোকেরা সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকারক বা নাগরিক জীবন বিপন্ন হতে পারে এমন ভয়ঙ্কর সব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে_ সে শঙ্কা থেকে কথাটি বলা হতো। কিন্তু এখন আমাদের দেশে ব্যাপারটা উল্টে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পড়াশোনার বাইরেও চাপাতি দিয়ে কোপানো, রড দিয়ে হাত-পা থেঁতলে দেওয়া, পিস্তল তাক করে প্রতিপক্ষকে গুলি করাসহ এত বেশি বিদ্যা আয়ত্ত করছে যে, বাংলাদেশের মানুষ শঙ্কিত হয়ে উঠেছে! অবশ্য ছাত্রলীগ নেতাদের বেশি বিদ্যা কতটা ভয়ঙ্করী বাংলাদেশের মানুষ তা ইতিমধ্যে নিজের চোখে দেখেছে গত ৯ ডিসেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রিধারী ছাত্রলীগ নেতাদের নির্মম প্রহার আর চাপাতির আঘাতে অভাবের জন্য বেশিদূর পড়ালেখা করতে না পারা অল্পশিক্ষিত দর্জি বিশ্বজিৎকে খুন হতে হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যাশিক্ষার বাইরেও চাঁদাবাজি, খুন ও অস্ত্র চালনসহ আরও নানা বিদ্যায় ছাত্রলীগ নেতারা যে পারদর্শী হয়ে উঠছিল তার পরিচয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হচ্ছিল কিছুদিন ধরে। পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম খুনি শাকিল স্বীকার করেছে যে, আওয়ামী লীগের আমলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারে, সেটি তারা বাস্তবে তো দূরের কথা; দুঃস্বপ্নেও তা কখনও তাদের মনে আসেনি।
বিশ্বজিৎ হত্যার নির্মম ঘটনাটি টেলিভিশন আর পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বজিতের হত্যাকারী হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের পিতামাতারা ডেইলি স্টার পত্রিকার সাংবাদিককে জানিয়েছেন, টেলিভিশনে বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনা দেখার পর তাদের সন্তানরা চাপাতি দিয়ে কোপানো, রড দিয়ে প্রহারসহ মানুষ মারার এমন সব বিদ্যা অর্জন (!) করেছেন, যা টেলিভিশনে নিজেদের চোখে না দেখলে তারা বিশ্বাস করতে পারতেন না কোনোদিন। সাংবাদিকদের তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে জানিয়েছেন, নিজেরা খেয়ে না খেয়ে, অভাবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে, সন্তানদের গ্রাম থেকে শহরে পাঠিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য।
আসলে ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগ আর পুলিশের আশকারাই মূলত ছাত্রলীগকে আজ এতটা বেপরোয়া করে তুলেছে। সংবাদপত্রে এবং টেলিভিশনে বিশ্বজিৎ হত্যার পূর্বাপর যে ঘটনাক্রম প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা গেছে, পুলিশ ঘটনাস্থলের একেবারে কাছে অবস্থান করেও ঘটনাটি দেখেনি(!)। তাই এই সংশয় স্বাভাবিক যে, ছাত্রলীগের মুরবি্ব আওয়ামী লীগ সরকার, যাদের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ ্তুনিরপেক্ষ' হতে পারে না, পুলিশকে ঘটনার সময় চোখে হাতচাপা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন সম্ভবত। তাই ছাত্রলীগ নেতারা যখন বিশ্বজিৎকে বেধড়ক প্রহার করছিল, পুলিশ তখন তাকে রক্ষা অপেক্ষা ছাত্রলীগ নেতাদের হামলায় যাতে কোনো দিক থেকে বাধা না আসে, সেদিকেই ব্যস্ত থেকেছে। প্রায় আধঘণ্টাজুড়ে বিশ্বজিতের ওপর চলা এই হামলা ও তার মোকাবেলায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা সমগ্র বাংলাদেশের লজ্জা_ যা ইউরো নিউজ টেলিভিশন চ্যানেলসহ ইউরোপের পত্রপত্রিকায় ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার ক্ষমতায় আসার পর অনেকবারই বলেছেন, উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ছাত্রলীগ নেতাদেরই আগামী দিনে দেশের দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উচ্চশিক্ষা অর্জনের ধারেকাছেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নেই। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি ও প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র তাক করে প্রতিপক্ষকে গুলি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মারধর ও ঘেরাও; মোট কথা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের উপদ্রবের কোনো বিরাম নেই। বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির বিএনপি সরকারের ক্ষমতাকালে গায়ের জোরে,মারপিট করে যেভাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তার বা ছাত্র সংসদ দখল করেছে , ছাত্রলীগও সে ধারা অব্যাহত রেখেছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা যদি নিজেদের সরকারকে দিনবদলের সরকার বলে মনে করেন ছাত্ররাজনীতিতে রাজনৈতিক দলের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করুন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিবেদন, ছাত্রলীগকে নিয়ে সতর্ক হোন। তৎপর হোন।
shahnewazbiplob@hotmail.com

No comments

Powered by Blogger.