হিতে বিপরীত by শেখ রোকন

নেহরু-গান্ধী পরিবারের পুত্রবধূ মানেকা গান্ধীর কংগ্রেসবিরোধী তৎপরতা কীভাবে বিভিন্ন সময়ে ভারতের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারটির জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে, তা প্রায় সর্বজনবিদিত।
শ্বশুরগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণেই কেবল নয়, পশু ক্লেশ নিবারণ এবং পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক কার্যক্রমও তাকে বহুবার ভারতের ভেতর ও বাইরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে। অনেকে ঠাট্টা করে বলেন, ইন্দিরা-রাজীবের প্রতি মানেকা গান্ধীর যতটা বিদ্বেষ, পশুর প্রতি যেন ততটাই ভালোবাসা। তবে পরাক্রমশালী শাশুড়ি কিংবা ভাশুরের সঙ্গে পারিবারিক বিরোধকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করে তিনি কতটা লাভবান হয়েছেন, বলা কঠিন। কিন্তু পশু ও পরিবেশ প্রেম তাকে বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি ও সম্মান দিয়েছে। সে কারণেই কি-না জানা নেই, একটি কথা তিনি সবসময় বলতে পছন্দ করেন_ 'পশু ক্লেশ নিবারণে আমি সবকিছু করতে পারি।' ধর্মপরায়ণ ও নিরামিষভোজী এক হিন্দু বিধবা পশুদের জন্য ইতিমধ্যে যা করেছেন, তার বাইরে আর কী করতে পারেন? আর যাই হোক তিনি যে বোনি-জিল লাফলিনের মতো পারবেন না, বলাই বাহুল্য।
মানেকা গান্ধীকে যতটা সহজে চিহ্নিত করা যায়, লাফলিন ততটা পরিচিত নাম নয়। কিছুদিন আগেও তিনি ছিলেন আমেরিকান ফুটবল টিম ডালাস কাউবয়সের চিয়ারলিডার। টোয়েন্টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ কিংবা আইপিএলের মনোযোগী দর্শকরা নিশ্চয়ই চিয়ারলিডার নামের নাচনেওয়ালিদের চেনেন। চার-ছক্কা হলে কিংবা উইকেটের পতন হলে তারা দল বেঁধে নেচে দর্শকদের আনন্দ কিংবা নিরানন্দ আরও গভীর করে তোলে। কিন্তু খেলা শেষে চিয়ারলিডারদের কে-ইবা মনে রাখে? খেলোয়াড়, আম্পায়ার, টিম ম্যানেজমেন্ট, আয়োজক মায় দর্শকরাও বহুদিন পর্যন্ত আলোচিত হন। আর চিয়ারলিডাররা? নৈবচ নৈবচ। সম্প্রতি অবশ্য লাফলিনের কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এনবিএর (ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন) একমাত্র নারী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তবে তাকে বিশ্বজোড়া পরিচিত করেছে একটি পশু ক্লেশ নিবারণী পোস্টার।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পেটার (পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব এনিম্যালস) প্রচারাভিযানের সাধারণ কৌশল হচ্ছে_ স্পর্শকাতর কিংবা বিতর্কিত পোস্টার বা অনুষ্ঠান ব্যবহার করে মানুষকে নাড়া দেওয়া। কিন্তু এবার তারা যা করেছে, তা অতীতের সর্ব বিতর্ককে ছাড়িয়ে গেছে। পেটার একটি পোস্টারে মডেল হয়েছেন লাফলিন_ একটি লকার রুমে নগ্ন দাঁড়িয়ে বলছেন, 'আমার মতো শরীর বানাতে চাও? তাহলে নিরামিষ খাও!'
এতে প্রচারাভিযানের সাফল্য কতটা পাওয়া গেছে বলা কঠিন; কিন্তু ওই পোস্টার নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপ-আমেরিকার পরিবেশবাদীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন, আমিষবিরোধী প্রচারণা তো নয়ই, এই পোস্টারের মধ্য দিয়ে আসলে নারীকেই একখণ্ড মাংশপিণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পশু ক্লেশ নিবারণী প্রতিষ্ঠানের পোস্টার নয়, এটি বরং প্লেবয় ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হলে ভালো হতো। শেষ খবর হচ্ছে, লাফলিনের এমন আহ্বানে কতজন আমিষভোজী নিরামিষে আস্থা রেখেছেন জানা যায়নি। তবে পেটার বেশ কিছু সমর্থক ওই পোস্টারের প্রতিবাদে ঘোষণা দিয়ে সংগঠন ছেড়েছেন।
skrokon@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.