বলিউড- আমির-রানী-কারিনার তালাশ

আমির খানের ছবি বক্স অফিস মাতাবে, এটা যেন ধ্রুব সত্য। প্রায় এক যুগ আগে আমিরের ছবি মেলার প্রযোজক ক্ষতির অঙ্ক গুনেছিলেন। ওটাই শেষ। তারপর লগান, দিল চাহাতা হ্যায়, রং দে বাসন্তী, ফানা, তারে জামিন পার, গজনি ও থ্রি ইডিয়টস—প্রতিটি ছবিই আয়ের রেকর্ড ভাঙচুরের খেলায় মেতেছিল।
এমনকি কথিত ‘ফ্লপ’ মঙ্গল পান্ডের প্রযোজকও খানিকটা লাভের মুখ দেখেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার মুক্তি পেল আমিরের তালাশ। প্রযোজক ফারহান আখতাররা কখনো সহপ্রযোজনায় বিশ্বাস করেন না। কিন্তু আমির বলে কথা! ফারহানদের সঙ্গে আমিরও এ ছবিতে প্রযোজকের হ্যাট মাথায় পরেছেন। এ ছবিকে ঘিরে কিছু গাণিতিক হিসাব দেওয়া যাক: প্রায় তিন বছর পর আমিরের কোনো পূর্ণাঙ্গ ছবি মুক্তি পেল। তিন বছর পর আবারও একসঙ্গে জুটি বেঁধেছেন আমির-কারিনা। রানী মুখার্জির সঙ্গে আমির ’৯৮-তে প্রথম অভিনয় করলেও অনেক বছর পর দুজনের একসঙ্গে কোনো ছবি মুক্তি পেল। প্রায় ১০ বছর পর যৌনকর্মীর চরিত্রে কারিনাকে আবারও পাওয়া গেল এবং ১৩ বছর পর পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে আবারও ফিরে এলেন আমির খান। ১০ বছর পর রানী-কারিনাও একসঙ্গে অভিনয় করলেন। এত চমকের হাতছানি যে ছবিতে, সে ছবি যে মুক্তির প্রথম তিন দিনে শুধু ভারত থেকে ৪৭ কোটি ১০ লাখ রুপি উঠিয়ে আনবে, এটাই স্বাভাবিক। ৫০ কোটি রুপি বাজেটের এ ছবিটি সনি চ্যানেল এমনিতেই ৬০ কোটি রুপি দিয়ে কিনে নিয়েছে। আমির জানেন, তাঁর অভিনীত ‘সুরজন সিং শেখায়াত’ চরিত্র সালমানের ‘চুলবুল পান্ডে’ কিংবা অক্ষয়ের ‘রাউডি রাঠোড়’-এর মতো আমুদে নয়। নাচ-গানে পারদর্শী নন। আর তাই তালাশ ছোট শহরগুলো কিংবা একক প্রেক্ষাগৃহগুলোয় রমরমা ব্যবসা করবে না, এটাও যেন জানতেন আমির ও পরিচালক রীমা কাগতি।
বলিউডপাড়ার বাসিন্দারা অবশ্য বরাবরের মতো এবারও আমিরবন্দনায় পঞ্চমুখ। স্বয়ং সালমান খান বলেছেন, ‘আমির এর আগেও সারফারোশ ছবিতে পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তবে তালাশ-এর আমির যেন সম্পূর্ণ নতুন এক আমির।’ মুক্তির আগে অনেকেই তালাশকে বিদ্যা বালানের কাহানির কপি বলতে চেয়েছিলেন। এমনকি অ্যাক্ট অব প্রভিডেন্স কিংবা শাটার আইল্যান্ড-এর বলিউডি সংস্করণও বলার চেষ্টা করেছেন অনেকে। মুঠোফোনে টেক্সট ম্যাসেজ ছড়িয়ে বেরসিকেরা বলার চেষ্টা করেছিলেন, ছবির প্রকৃত খুনি আসলে আমির নিজেই। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোনো তথ্যই ধোপে টেকেনি। পরিচালক করন জোহর জানান, এ রকম সাসপেন্স থ্রিলার অতীতে কোনো হিন্দি ছবিতে দেখা যায়নি। রানী-কারিনা এ ছবিতে আমিরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। রানীর অভিনয়কে ‘দুর্দান্ত’ আর কারিনার অভিনয়কে ‘বিস্ময়কর’ উপাধি দিতেও কার্পণ্য করছেন না বলিউড-বিশ্লেষকেরা। কারিনা অবশ্য নয় বছর আগে অক্ষয়ের সঙ্গে একই নামের একটি ফ্লপ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। বিয়ের পর কারিনার প্রথম ছবির সাফল্যে স্বামী সাইফ এবার পার্টি দিয়েছেন। সেই পার্টিতেই প্রথমবারের মতো তালাশ দেখবেন কারিনা। প্রিমিয়ার শোর দিন রানী-আমির উপস্থিত থাকলেও কারিনা ব্যস্ত ছিলেন সালমানের ‘বিগ বস ৬’-এর সেটে; দাবাং ২-এর প্রচারের কাজে। এতে অবশ্য আমির মনঃক্ষুণ্ন হননি। কারণ, সালমান তাঁরই ‘দোস্ত’। আমির বরং খুশি প্রথমবারের মতো নারীনির্মাতার সঙ্গে কাজ করতে পেরে। রীমা কাগতি শুটিংয়ের আগে দুই মাস মহড়া করেছেন, আমিরের পরামর্শ মোতাবেক কিছু চিত্রনাট্য অদল-বদল করেছেন, প্রচারের খাতিরে অভিনয়সমৃদ্ধ একটি আইটেম গান করেছেন। তবে তালাশ নিয়ে ফারহান-আমির-রীমা—কেউই প্রচারে বাড়াবাড়ি করতে চাননি। আমির মনে করেন, প্রতিটি ছবিরই প্রচারের আলাদা স্ট্র্যাটেজি হওয়া উচিত। গজনি, থ্রি ইডিয়টস, দাবাং ও রা ওয়ান-এর প্রচারের সঙ্গে তালাশ-এর প্রচারণার তফাত থাকা উচিত। আর এ কারণেই মেপে মেপে প্রচারণা করেছেন আমির। এই নতুন স্ট্র্যাটেজিতে যে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, তা বলা যায় না। বক্স অফিস অন্তত উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। জানাচ্ছে, আমিরের তালাশ এখন পর্যন্ত সুপারহিট!
 রুম্মান রশীদ খান
টাইমস অব ইন্ডিয়া, বলিউড হাঙ্গামা, ফিল্মফেয়ার ডট কম, ফিল্মিক্যাফে, রেডিফ অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.