প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক-আশার আলো

বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ লাখ লোক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। তাদের কল্যাণে একটি বিশেষ ব্যাংক স্থাপনের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। বিশেষ করে মনে রাখতে হবে, আমাদের যেসব কর্মী নানা দেশে কাজ করতে যান তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ স্বল্পশিক্ষিত এবং অদক্ষ বা কম দক্ষ।
চাকরি নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের অনেকেই চাষের জমিসহ পরিবারের সহায়সম্পদ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। তাদের আশা থাকে, বাইরে গিয়ে ভালো উপার্জন করে বিক্রি কিংবা বন্ধক রাখা সম্পত্তি ফের অধিকারে নিয়ে আসবেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেটা হয় না। যারা প্রবাসে যাওয়ার চেষ্টা করে প্রতারিত হন তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে পড়ে। একূল-ওকূল সব কূল হারিয়ে তারা হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তাদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠতেই পারে। বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'এখন থেকে যারা বিদেশ যাবেন তারা জামানতবিহীন ঋণ পাবেন। এ ব্যাংকটি বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর খরচ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।' এটা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে প্রবাসে কাজে যেতে আগ্রহী লাখ লাখ বাংলাদেশি স্বস্তি পাবেন। প্রবাসে যারা যাবেন তারা দেশের বড় সম্পদ। কারণ তারা একদিকে দেশের শ্রমবাজারে চাপ কমাচ্ছেন এবং অন্যদিকে নিজেদের কঠোর শ্রমে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়ে রিজার্ভ পরিস্থিতি ভালো রাখছেন। বেশিরভাগ রিত্রুক্রটিং এজেন্সি সম্পর্কেই প্রবাসে যাওয়া কর্মীদের নানা ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তারা বেশি চার্জ ধার্য করে এবং এর ব্যবস্থা করতে গিয়ে জমি ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ বিক্রি করতে হয় কিংবা ধারদেনা করতে হয়। প্রবাসে কাজের জন্য যারা মনোনীত হবেন, তাদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হলে এ সমস্যার অনেকটাই নিরসন হবে। আমরা আশা করব, দ্রুত ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু হবে এবং এ ব্যাংকের সঙ্গে অনেক মানুষের লেনদেন হবে। সমাজের ঠিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয়_ এ ধরনের লোকদের সরকারি ব্যাংকে ঠিক গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে গিয়ে এ ধরনের সমস্যায় পড়লে এর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। মোট কথা, এটি কোনোভাবেই যেন আমলাতান্ত্রিক লালফিতার খপ্পরে না পড়ে। এখানে কর্মী হিসেবে দক্ষ ও যোগ্যদের নিয়োগ দিতে হবে এবং প্রবাসে যে ধরনের কর্মী কাজের জন্য যান তাদের সঙ্গে কাজ করায় আন্তরিকতা থাকতে হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে এ ব্যাংকের শাখা থাকবে, সেটা ধরে নেওয়া যায়। প্রবাস থেকে প্রতিবছর যে বিপুল অঙ্কের অর্থ দেশে আসে, অর্থনৈতিক উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে তার যথাযথ ব্যবহার হয় না। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সঙ্গে এমন বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা দরকার, যারা এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব প্রদান করবেন। ১০০ কোটি টাকা মূলধনের এ ব্যাংকের যাত্রা শুভ হোক। দেশে যে অর্ধশতাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে তারাও ক্রমে এ ব্যাংকের কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে এর কিছু অংশ নিজেরাও চালু করবে_ এ প্রত্যাশা থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.