বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম-জনগণের ওপর আর বোঝা চাপাবেন না

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে সরকার আবারও জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে যাচ্ছে। চলতি মাসেই নতুন দাম কার্যকর করার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু লিটারপ্রতি কত টাকা দাম বাড়ানো হবে তা অবশ্য আমরা এখনো জানি না।
তবে জ্বালানি তেলের দাম যতই বাড়ানো হোক, আমাদের তা মুখ বুজে সয়ে যেতেই হবে। কারণ কিছু অদৃশ্য স্বার্থের কাছে আমাদের হাত-পা বাঁধা।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে, পণ্যমূল্য আরেক দফা বাড়বে এবং আয় না বাড়লেও আমরা বর্ধিত মূল্যেই সেসব পণ্য কিনতে বাধ্য হব। সেখানেও কারণ, আমাদের করার কিছুই নেই। আর পানির ধর্ম যেমন নিচের দিকে প্রবাহিত হওয়া, তেমনি সরকারও সব দায় জনগণের মাথায় চাপিয়ে খুবই স্বস্তি অনুভব করে। আইএমএফ কিছু শর্তের বিনিময়ে সরকারকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। সেসব শর্তের মধ্যে আছে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো বা সমন্বয় করা এবং ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দিয়ে দেওয়া। সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে রাজি হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নয়। অর্থমন্ত্রী যুক্তি দেখিয়েছেন, ব্যাংকগুলো সরকারের, কাজেই পরিচালক নিয়োগের দায়িত্বটা সরকারের হাতেই থাকবে। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান কোথায়? দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়ে এটি কি সরকারের পক্ষে কাজ করছে না? আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক মানে কি দলীয় নেতা-কর্মীদের পেট মোটাকরণ প্রকল্প? সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে জালিয়াতিসহ নানা ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারির যে ঘটনা দেখেছি, তাতে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায়। তার পরও এ ক্ষেত্রে আইএমএফের শর্ত মানছে না সরকার। কিন্তু জনগণের কাঁধে আরেক দফা বোঝা চাপানোর ব্যাপারে সরকার এত উৎসাহী কেন? গ্যাস কম্পানি, এমনকি পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে উৎপাদিত জ্বালানি তেল অবিক্রীত পড়ে থাকে। ফলে তারা পূর্ণ উৎপাদনক্ষমতা কাজে লাগাতে পারে না। সেই তেল ফেলে রেখে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিদেশ থেকে তেল আমদানিতে বেশি আগ্রহী কেন? সেই প্রতিষ্ঠানের লোকসানের যৌক্তিকতা বিচার না করে সরকার আইএমএফের দোহাই দিয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে এত সহজেই রাজি হয়ে যায় কেন?
ক্ষমতার শেষ বছরে এসে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ রাখতে ১০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়াটা বর্তমান সরকারের জন্য খুবই জরুরি- সেটা আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু সে জন্য জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা কেন? তেলভিত্তিক যেসব রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, যেগুলোতে বিপিসি প্রচুর ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে, সেসব ক্ষেত্রে ভর্তুকির সমন্বয় করাটা বেশি জরুরি নয় কি? এত দিনেও কেন আমরা অস্থায়ী সমাধান তথা রেন্টাল পাওয়ার থেকে বেরিয়ে আসতে পারলাম না? কেন রেন্টালের বোঝা জাতিকে আরো বেশি করে বহন করতে হচ্ছে- আমাদের এসব প্রশ্নের জবাব কে দেবে। এদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটিও প্রায় সম্পূর্ণ করে রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেই এর আগে গ্যাসের দাম তিন দফা বাড়ানো হয়েছে। চতুর্থ দফায় দাম বাড়লেও আমাদের করার কিছু নেই, বেশি দাম দিতে বাধ্য হব আমরা। তার পরও সরকারকে জনগণের আস্থায় থাকার অনুরোধ জানাব। সাধারণ মানুষের ঘারে এভাবে ক্রমাগত বোঝা চাপাতে থাকলে সেই আস্থায় চিড় ধরবেই।

No comments

Powered by Blogger.