হলিউড- টোয়ালাইটের মধুরেণ সমাপয়েৎ

কত কিছুই না হয়ে গেল। সম্পর্কের পাড় ভাঙল। আবার জেগে উঠল চর। সপাটে যে কপাট বন্ধ করেছিলেন কারস্টেন স্টুয়ার্টের জন্য, নিজের প্রিয়তমা বেলার জন্য সেই দুয়ার আবার খুলে দিলেন রবার্ট প্যাটিনসন ওরফে এডওয়ার্ড।
কিন্তু নিন্দুকের মুখে কি আর কুলুপ এঁটে দেওয়া যায়? তাঁদের দাবি, স্টুয়ার্ট-প্যাটিনসনের এই সম্পর্কের জোর স্রেফ একটা চাল। হূদয়ের টানে এই হূদয়ের কাছে ফিরে আসা নয়। সাধারণ মানুষের চোখে ধুলা দেওয়া।
পর্দায় বেলা-এডওয়ার্ড একে অন্যের জন্য জীবন দিয়ে দেবেন, আর বাস্তবের রঙ্গমঞ্চে স্টুয়ার্ট-প্যাটিনসনের দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে বেঁকে যাবে; তা তো আর ‘পাবলিক’ মানবে না। নিজেদের শেষ ছবির স্বার্থেই নাকি এই লোক দেখানো ফিরে আসা। আদতে প্রতারক স্টুয়ার্টকে ক্ষমাই করেননি প্যাটিনসন! শুধু টোয়ালাইট সাগার শেষ ছবির স্বার্থে, প্রযোজকদের পরামর্শে (পড়ুন চাপে) বাস্তবের দুনিয়াতেও নাকি প্রেম প্রেম অভিনয় করছেন তাঁরা।
কত কিছুই হয়ে গেল। জেমস বন্ড হাজির হলেন স্কাইফল নিয়ে। স্টিফেন স্পিলবার্গ তাঁর জাদুর ঝুলি থেকে বার করলেন লিঙ্কন। ব্র্যাড পিটের নতুন ছবি কিলিং দেম সফটলিও মুক্তি পেল। কিন্তু নিন্দুকদের গা-জ্বলুনি সব কথা, টোয়ালাইটের শেষ ছবির ক্র্যাশ ল্যান্ডিংয়ের ভবিষ্যদ্বাণী—সব মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে ব্রেকিং ডন: পার্ট টু সগৌরবে চলছে। মুক্তির তৃতীয় সপ্তাহেও বাঘা বাঘা ছবির ভিড়ে এখনো টপচার্টে টোয়ালাইট সাগার শেষ ছবি!
চার বছর আগের নভেম্বরেই মুক্তি পেয়েছিল সিরিজের প্রথম ছবি টোয়ালাইট। ভ্যাম্পায়ার এডওয়ার্ডের সঙ্গে মানবী বেলার অসম উথালপাতাল প্রেম। শুরুতেই বাজিমাত। দেখতে দেখতে সেই সিরিজেরই পঞ্চম ও শেষ ছবিও মুক্তি পেয়ে গেল। সিরিজের প্রথম ছবি থেকে যে স্বপ্ন দেখে আসছে বেলা, সেই স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হলো। মানবী থেকে সেও হয়ে গেল ভ্যাম্পায়ার। জন্ম নিল তাদের প্রথম সন্তান, রেনেসমি নামের ফুটফুটে এক মেয়ে। যে মেয়ে কিনা আধেক মানবী, আধেক ভ্যাম্পায়ার!
ছোট্ট রেনেসমির মধ্যে দেখা যেতে থাকল অলৌকিক ক্ষমতা। বাবার মতোই যে প্রচণ্ড ক্ষিপ্রগতির। এই খবর পৌঁছে গেল ভ্যাম্পায়ার জগতের শাসক ভলটুরির কানে। তার ধারণা হলো, রেনেসমি আসলে জন্মসূত্রে ভ্যাম্পায়ার নয়। তাকে দংশন করে ভ্যাম্পায়ার বানানো হয়েছে, যেটা ভ্যাম্পায়ার দুনিয়ার আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন। তা ছাড়া রেনেসমি ‘অমর শিশু’। এটাও মেনে নেওয়া যায় না। ভলটুরি হলে গেল ভিলেন। তার লক্ষ্যই এখন রেনেসমিকে খুন করে ফেলা। বেলা-এডওয়ার্ড কি পারবে তাদের সন্তানকে বাঁচাতে?
এই হলো ছবির গল্প। টোয়ালাইটের সাফল্যের মূলে শুধু ধবধবে রোমান্স নেই। আছে অ্যাকশন। আছে সাসপেন্সের ঝাঁজ। শেষ ছবিতে এসেই যেন আরও ধুন্ধুমার অবস্থা। তিন সপ্তাহেই ছবিটি বিশ্বব্যাপী আয় করে ফেলেছে ৬০ কোটি ডলার। ব্রেকিং ডনের প্রথম পর্ব মোট আয় করেছিল ৭১ কোটি ডলার। সিরিজের দ্বিতীয় ছবি নিউ মুন-এর আয় ছিল ৭০ কোটি এবং তৃতীয় ছবি এক্লিপস-এর আয় ছিল ৬৯ কোটি ডলার। শেষ পর্ব যে সিরিজের আগের আয়ের সব রেকর্ড ভাঙতে চলেছে, তা নিশ্চিত। এরই মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলারের ঘরও স্পর্শ করে ফেলেছে টোয়ালাইট সাগার মোটমাট আয়!
স্টুয়ার্ট আগেই বলেছিলেন, ছবিটা এক পর্যায়ে তাঁর জন্য বোঝা হয়ে গিয়েছিল। তিনি মুক্তির স্বাদ খুঁজছিলেন। এই ছবির সেটেই বেড়ে উঠেছেন। কাজ শুরু করেছিলেন যখন, বয়স ছিল মাত্র ১৭। টিন-এর খোলস ছেড়ে এখন তিনি ২২ বছরের তরুণী। এই ছবি শুধু যশ-খ্যাতি-বিত্ত দেয়নি, এনে দিয়েছে একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি—তাঁর প্রেমিকপুরুষ। পর্দার এডওয়ার্ডকে বাস্তবের জীবনেও খুঁজে পেয়েছিলেন। প্যাটিনসনের সঙ্গে চলছিল জমজমাট প্রেম।
এর মধ্যে স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য হান্টসম্যান করতে গিয়ে ওই ছবির পরিচালক রুপার্ট স্যান্ডার্সকে ‘হে ক্ষণিকের অতিথি’ মেনে কদিনের সাময়িক অভিসার করেছেন। সেটাই ফাঁস হয়ে গিয়ে সে কী তোলপাড়!
ব্রেকিং ডনের দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তি কী হবে, এ নিয়ে টোয়ালাইট-ভক্তদের মনে একটা ভয় ছিল। হ্যাপিং এন্ডিং থাকছে তো! ‘অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল’ যতই ক্লিশে, ততটাই প্রার্থনীয়! হ্যাঁ, সেটাই হচ্ছে। বাস্তবে যেমন মিল হয়ে গেছে স্টুয়ার্ট-প্যাটিনসনের। একেই বলে মধুরেণ সমাপয়েৎ!
 রাজীব হাসান
এলএ টাইমস ও হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.