ইসির সঙ্গে সংলাপ-বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিরোধে আইন চায় আ. লীগ

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংসদীয় আসনের ২০০৮ সালে নির্ধারিত সীমানাতেই দশম জাতীয় নির্বাচন চেয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কেউ যাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে না পারেন এবং নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতার কারণে কেউ বহিষ্কৃত হলে তাঁকে পরবর্তী দুই মেয়াদে নির্বাচনে
অযোগ্য করার জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে দলটির ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যোগ দিয়ে এ অনুরোধ জানায়।
বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত বেশ কিছু স্থানীয় এবং সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ এ সুপারিশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গতকাল ইসির এই সংলাপে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, দপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান খান, উপদপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমেদ।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, দলীয় সরকারে অধীনে যে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে, তা এই সরকারের আমলে বর্তমান ও আগের নির্বাচন কমিশন প্রমাণ দিয়েছে। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাবে। বর্তমান ইসি আগের ইসির মতো দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে গেলে কারো কোনো অযৌক্তিক বিরোধিতা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সংলাপকালে নেতারা নির্বাচন কমিশনারদের টিভি ক্যামেরার সামনে বেশি কথা বলে জাতিকে বিব্রত না করার পরামর্শও দেন।
আইন সংশোধন ও সীমানাসংক্রান্তে ক্ষমতাসীন দলের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজের অগ্রগতি এবং তথ্য সংরক্ষণে ইসির পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনী আইনের বিধিগুলো সংশোধনের কাজ কিছুটা সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকিগুলো সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। এর পরই আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হবে। আর সীমানা পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত কাজ শুরু হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ হওয়ার পর। সিইসি আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতির বিষয়ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে উপস্থাপন করেন। সংলাপের আগে দিনের প্রথমার্ধে এ নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক হয়।
সংলাপে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, 'আমরা জানি, জাতীয় সংসদের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য কিছুসংখ্যক নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার জন্য বিভিন্ন মহলে দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে অর্থাৎ মাত্র চার বছর পূর্বে যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা এত শিগগিরই পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।' ১৯৭৬ সালের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশের ৮ ধারা অনুযায়ী ১০ বছর পরপর আদমশুমারি করার অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পুনরায় জাতীয় সংসদের আসনগুলোর সীমানা নির্ধারণ করার যে বিধান রয়েছে এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুচিন্তিত মতামত হচ্ছে, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রণীত পদ্ধতি অনুসরণের ফলে ঢাকাসহ মোট ১৩০টি আসনের সীমানায় যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল তা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত রেখে ১০ বছর পরে অর্থাৎ ২০১৮ সালে পুনর্নির্ধারিত হতে পারে।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি হচ্ছে রাজনৈতিক দল। এসব দলের নেতা-কর্মীরা আজীবন জনসেবা করে মানুষের কল্যাণ সাধন করেন এবং জনগণের আস্থা অর্জনে সমর্থ হন। কোনো রাজনৈতিক দল যখন কোনো নির্বাচনে কোনো কর্মী বা নেতাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন দান করে, তখন বহু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সর্বোপরি দল ও মানুষের সর্বোচ্চ কল্যাণদৃষ্টে তা করে থাকে। পরে দলের কোনো কর্মী যখন এ মনোনয়ন অগ্রাহ্য বা অমান্য করেন তখন দলের শৃঙ্খলাই শুধু নয়, গণতন্ত্রের ভিতও নড়ে যায়। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে সুচিন্তিত অভিমতে উপনীত হয়েছে যে ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দলের চিহ্নিত বা নিবন্ধিত কর্মী দলের মনোনয়ন অগ্রাহ্য করে নিজে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না বা দলের অন্য কোনো কর্মী বা নেতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সহযোগিতা করতে পারবেন না। যদি করেন তবে দল কর্তৃক তিনি বহিষ্কৃত হবেন এবং পরবর্তী এক বা একাধিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশনের কাছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুপারিশ, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অগ্রিম নিয়ে রাখবে এবং যথাসময়ে একজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে অন্যদের প্রার্থিতা বাতিল করবে। এর ফলে দল কর্তৃক মনোনীত প্রার্থীই শুধু নির্বাচন করতে পারবেন। যদি তাঁর প্রার্থিতা বা মনোনয়নপত্র বাতিল হয় সে ক্ষেত্রে বিকল্প প্রার্থী দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন; কিন্তু কোনো অবস্থাতেই বিকল্প প্রার্থীসহ অন্য যাঁরা দলীয়ভাবে মনোনয়ন প্রার্থনা করেছেন, তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। যদি করেন, তবে তিনি দল কর্তৃক বহিষ্কৃত হবেন এবং পরবর্তী দুটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এ মর্মে নির্বাচন কমিশনকে আরপিওতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য আমরা সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।
সংলাপে তোফায়েল আহমেদ বলেন, মাত্র চার বছর আগে জাতীয় সংসদের আসনগুলোর সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। এখন এতে হাত দিতে গেলে জটিলতা বাড়বে। এটি একটি সেট ম্যাটার। দাবি, আপত্তি যা ছিল এর ফয়সালা ২০০৮ সালেই হয়ে গেছে।
আমির হোসেন আমু বলেন, আগের নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে কোনো দল কোনো অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। সেভাবে এ কমিশনও এগিয়ে গেলে কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো অসার ও অযৌক্তিক বক্তব্য জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি সব দলের অংশগ্রহণে আপনারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ বিষয়ে আপনাদের প্রতি আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।'

No comments

Powered by Blogger.