হরতাল ও নৈরাজ্য-জামায়াতের আগুন নিয়ে খেলা

জামায়াতে ইসলামী আহূত মঙ্গলবারের হরতাল চলাকালে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এ দল এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে অনেক গাড়ি ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করে।
তাদের হামলা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, এমনকি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের গাড়িও রক্ষা পায়নি। জামায়াতের একটি মিছিল থেকে মার্কিন দূতাবাসের গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এক পর্যায়ে দলের সন্ত্রাসীরা গাড়িটি আটক করে এতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করে। হামলায় দূতাবাসের গাড়িচালক ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা আহত হন। অথচ দূতাবাসের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত। এই হামলার ঘটনাটি অনভিপ্রেত, ন্যক্কারজনক এবং বিদ্বেষপ্রসূতও বলা যায়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি। জামায়াতে ইসলামী এই হামলার ঘটনার জন্য দলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা চেয়েছে এবং তারা এ জন্য ক্ষতিপূরণও দিতে চেয়েছে। কিন্তু এতে জামায়াতের সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার কর্মকাণ্ডের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তার উপশম হবে কি? শুধু ক্ষতিপূরণ দানের প্রস্তাবে মার্কিন দূতাবাসের গাড়িতে হামলার দায় মোচন হবে না। জামায়াতকে অবশ্যই সংযত আচরণ করতে হবে। সারাদেশে হরতালের নামে তারা যে ধরনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালিয়েছে তাকে কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই সমর্থন করতে পারেন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, জামায়াতের হরতাল আহ্বানের কারণ হিসেবে বেশ কয়েকটি ইস্যু তুলে ধরা হলেও সেখানে মূলত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারাধীন তাদের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দাবিই ছিল প্রধান। স্বাধীন বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সভা আহ্বান এবং সর্বশেষ হরতাল আহ্বান করে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা অশুভ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের ইঙ্গিতবাহী বলে কেউ দাবি করলে জামায়াত কী জবাব দেবে? বিভিন্ন ইস্যুতে মিছিল, সভা, সমাবেশ আহ্বান অবশ্যই গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা এই অধিকার রক্ষার পক্ষে সবসময়ই সোচ্চার, গণতন্ত্রমনা মানুষ মাত্রই তা চাইবেন। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকারের সুযোগে হরতাল আহ্বান করে সহিংস কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়াকে কেউই সমর্থন করেন না। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিপুলসংখ্যক নেতা ও কর্মী গুরুতর অপরাধ করেছে। তাদের শাস্তি হতেই হবে এবং এটা হচ্ছে সরকারের প্রতি জনগণের ম্যান্ডেট। কোনো চাপ কিংবা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এই বিচার কাজ ভণ্ডুল করা যাবে না। জামায়াতে ইসলামীর জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, অগি্নসংযোগসহ নানা ধরনের নৈরাজ্যবাদী কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সভা-সমাবেশ এবং মঙ্গলবারের হরতালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারাধীন নেতাদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিটি প্রবলভাবে উঠে আসায় মানুষ তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়ে গেছে। বস্তুত স্বাধীনতার ৪১ বছর পর জামায়াতের এ ধরনের কর্মকাণ্ড আগুন নিয়ে খেলা ছাড়া কিছু নয়। সুস্থ, গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন দেশের উপযোগী ধারার রাজনীতি চর্চা তারা করবে, এটা এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না। সঙ্গতভাবেই তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি বিভিন্ন মহল থেকে প্রবলভাবে উঠছে। বিএনপিকেও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে পরিচালিত দলের সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখার বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করে দেখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.