আমতলীতে কথিত ফকির কালামের তেল চিকিৎসা

বরগুনার আমতলী শহরের মাজার রোডের হজরত ইসমাইল শাহর (রা.) মাজারে কালাম সিকদার (৪০) নামের কথিত এক ফকির এক সপ্তাহ ধরে জটিল সব রোগের অভিনব চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাঁর এই চিকিৎসার প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন স্থানীয় কিছু দালাল।
সরেজমিনে ঘুরে ফকিরের চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করেছে এমন কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের রগুনুদ্দিন গ্রামে। ইসমাইল শাহর মাজারে চার-পাঁচ দিন আগে এসে তিনি চিকিৎসা শুরু করলেও আগে থেকে আমতলীর বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান করে একশ্রেণীর দালাল সৃষ্টি করে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
চন্দ্রা গ্রামের সুলতান মিয়া নামের এক ব্যক্তি জানান, তাঁর বাক্প্রতিবন্ধী মেয়ের চিকিৎসার জন্য গাজী বাড়িতে গেলে কালাম ফকির তেলপড়া দিয়ে তাঁর কাছ থেকে চিকিৎসা ফি, তেল, মোমবাতিসহ অন্যান্য বাবদ ৭০০ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। গত সোমবার দুপুরে আমতলী শহরের মাজার রোডের হজরত ইসমাইল শাহর (রা.) মাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাজারের পাশের মাঠে বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজন কথিত ফকিরের তেলপড়া দিয়ে মাঠে শুইয়ে রোগীদের মালিশ করছেন। মাজারের পাশে একটি টিনের আড়চালায় কয়েকজন রোগীকে দালালেরা ফকিরের অলৌকিক ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন। কথিত ফকির কালাম লাঠি হাতে মাজারের আঙিনায় দাঁড়িয়ে আছেন।
রোগী পরিচয়দানকারী উপজেলার খলিয়ান এলাকার মো. শামীম দালাল পরিবেষ্টিত অবস্থায় জানান, তিনি হূদেরাগী। আগে দাঁড়ালে শরীরে কাঁপুনি দিত। ফকিরের তেলপড়া মালিশ করে অনেকটা সুস্থ বোধ করছেন। তবে এ ব্যাপারে ওই এলাকার স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, এভাবে ভুয়া রোগী সাজিয়ে ফকিরের পক্ষে ভুয়া প্রচার চালিয়ে রোগীর ভিড় বাড়ানো হচ্ছে। এর সঙ্গে এলাকার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী জড়িত।
কয়েকজন রোগী জানান, প্রথম দিকে কথিত ফকির কালাম চিকিৎসা বাবদ কোনো অর্থ দাবি করতেন না। তাঁর নিযুক্ত খাদেমরা অর্থ আদায় করতেন। তবে বর্তমানে তিনি নিজেই চিকিৎসা বাবদ টাকা চেয়ে নিতে শুরু করেছেন। প্রতিদিন এখানে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ রোগী আসে।
কথিত ফকির কালাম শিকদার বলেন, ‘একসময় আমার এলাকার লোকজন আমাকে টাইগার বাবা উপাধি দিয়েছিল। কিন্তু আমতলীতে এসে এত রোগীর চাপ যে তা সামলাতে আমাকে লাঠি নিয়ে নামতে হয়েছে। এখন লোকে আমাকে লাঠি বাবা হিসেবে সম্বোধন করে।’ কামাল সিকদারের দাবি, তিনি আজমির শরিফের খাজা বাবার আশীর্বাদে তেল মালিশের মাধ্যমে প্যারালাইসিস, পঙ্গু ও হাড়ভাঙা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এর বিনিময়ে তিনি কোনো অর্থ নেন না।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, এ ধরনের চিকিৎসা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। এতে রোগীর আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

No comments

Powered by Blogger.