অরাজকতা বন্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন- হরতালের নামে সহিংসতা

জামায়াতে ইসলামী হরতাল ডেকে সারা দেশে যে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছে, তা এযাবৎকালে কমই দেখা গেছে। যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে ওরা প্রমাণ করেছে যে সাধারণ মানুষের জানমালের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র দরদ নেই। পুলিশকে ওরা নির্মমভাবে পিটিয়েছে।
ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর কিংবা মানুষের সহায়সম্পদ ধ্বংস করা যে কত বড় অন্যায়, সে বোধটুকু তাদের নেই। এসব কাজ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য।
হরতালের সময় জামায়াতের কর্মীরা প্রগতি সরণিতে মার্কিন দূতাবাসের একটি গাড়িও ভাঙচুর করেছেন, এর চালক ও নিরাপত্তারক্ষীদের আহত করেছেন। এই ঘটনা নজিরবিহীন। অনেক হরতাল হয়েছে, রাজপথে অনেক গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। কিন্তু কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের গাড়ি কখনো আক্রমণের শিকারে পরিণত করা হয়নি। এটা কূটনীতিকদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি। এ জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এর দায়দায়িত্ব জামায়াতকেই বহন করতে হবে।
এই সহিংসতা আসলে ছিল গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার ওপর জামায়াতের পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা। পুলিশ সমাবেশ করার অনুমতি না দেওয়ায় হরতাল ডেকেছিল বলে জামায়াতের যুক্তি এখন আর ধোপে টেকে না। কারণ, সমাবেশের অনুমতির বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে ওরা। তাদের যুক্তি ছিল, সভা-সমাবেশ করা একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও, পুলিশ পেটানো কোন গণতন্ত্র?
আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই হরতাল-সমর্থক নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অপতৎপরতা শুরু করেন। আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্য নিয়ে ওরা মাঠে নামে। যখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে, তখন এ ধরনের সহিংসতা ও অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা দেশে আইনের শাসনের প্রতি বড় চ্যালেঞ্জ। গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ কখনো এ ধরনের তৎপরতা মেনে নেবে না।
এর আগে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে প্রমাণ করেছেন যে গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের আস্থা নেই। থাকলে তাঁরা প্রকাশ্য রাজনীতির পথ ত্যাগ করে কেন গোপনে প্রস্তুতি নিয়ে গেরিলা কায়দায় পুলিশের ওপর হামলা চালান? পুলিশের রাইফেল কেড়ে নিয়ে সেই রাইফেলের বাঁট দিয়ে পুলিশকে নির্মমভাবে পেটানোর যে ভিডিওচিত্র বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায় এসব কর্মী বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
জামায়াতে ইসলামী দলটি একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিল। দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, মা-বোনদের নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে, সাধারণ মানুষের সম্পদ লুটপাট করেছে। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। আজ সমগ্র জাতি যখন ৪১তম বিজয় উৎসব উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামী দলটি আবার স্বরূপে আবির্ভূত হলো।
তাণ্ডব সৃষ্টিকারীদের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। প্রকৃত অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.