প্রবীণ নীতিমালা-ফাইলবন্দি কেন?

প্রবীণবিষয়ক জাতীয় নীতিমালা পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি বলে গত বুধবার সমকালের তৃতীয় পৃষ্ঠায় একটি রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। রিপোর্টটিতে দেখা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবীণবিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন করে।
দেশে প্রবীণদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি এবং তাদের নানা সামাজিক ও ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে এরা যাতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সমাজের উপকারে লাগতে পারেন এবং তাদের জীবন যাতে নিরাপদ হয়, সে লক্ষ্যেই এ ধরনের নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ দেখা দেয় সমাজের মধ্য থেকেই। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রণীত নীতিমালা নীতিগতভাবে অনুমোদন করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের পরিচালনাধীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অনুমোদিত নীতিমালাটি ৩৪টি মন্ত্রণালয়ে যথারীতি পাঠানোও হয়। এরপর থেকেই কোনো এক অদৃশ্য কারণে এই নীতিমালার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রবীণদের সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তির যেটুকু সম্ভাবনা ছিল তা-ও উবে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশের বিপুলসংখ্যক প্রবীণ নারী-পুরুষ। অবশ্য সরকার বয়স্কভাতা চালু করেছে এবং সেটা অব্যাহত রয়েছে। অর্থের পরিমাণ যতই অকিঞ্চিৎকর হোক না কেন, এতে গ্রামের অসচ্ছল প্রবীণদের পরিবারের সক্ষমদের কাছে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে থাকার যন্ত্রণা কিছুটা হলেও লাঘব হওয়ার কথা। কিন্তু এই সিনিয়র সিটিজেনদের আরও অনেক কিছুই পাওনা রয়েছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে। প্রবীণ নীতিমালাটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ার কারণে এরা রাষ্ট্র ও সমাজের কাছ থেকে সম্ভাব্য আরও বিভিন্নমুখী সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে সরকারের তেমন আর্থিক খরচের প্রয়োজন পড়ে না বা যৎসামান্য আর্থিক বরাদ্দের প্রয়োজন পড়ে। সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেই কার্যকর করতে পারে। যেমন_ প্রবীণদের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে ঘোষণা ও পরিচয়পত্র প্রদান, সরকারি ও বেসরকারি পরিবহনে প্রবীণদের জন্য আসন সংরক্ষণ, স্বল্প ব্যয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা উত্তোলনের অগ্রাধিকার ইত্যাদি। যে মানুষগুলো তাদের সুদীর্ঘ কর্মজীবনে দেশ, সমাজ ও পরিবারকে সেবা প্রদান করেছেন, তাদের প্রতি শেষ জীবনে এটুকু করা খুব বেশি কিছু কি? বেসরকারি জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রবীণদের সংখ্যা এখন এক কোটি ৩০ লাখের মতো। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির কারণে প্রতি বছরই প্রবীণদের সংখ্যা বেড়ে চলবে। তাই এখনই দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জীবনকে স্বচ্ছন্দ ও নিরাপদ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সমাজের এগিয়ে আসা উচিত। সরকার প্রবীণবিষয়ক খসড়া নীতিমালাটি মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারেন আসন্ন বাজেট অধিবেশনের আগেই।

No comments

Powered by Blogger.