দিল্লিতে বাসে গণধর্ষণ-তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা সরকারের-'অবরোধ' তুলে নিচ্ছে পুলিশ পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক

নয়াদিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনা তদন্তে বিশেষ কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম গতকাল বুধবার জানান, দিল্লি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক উষা মেহরার নেতৃত্বে এ কমিশন গঠন করা হবে। তারা আগামী তিন মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে।
এদিকে ধর্ষণকারীর ফাঁসি এবং পথঘাটে নারীর নিরাপত্তার দাবিতে এক সপ্তাহ বিক্ষুব্ধ সময় পার করার পর শান্ত হয়ে এসেছে দিল্লি। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে বন্ধ করে দেওয়া রাস্তাগুলো খুলে দিয়েছে পুলিশ। তবে ১৪৪ ধারা বহাল আছে।
এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ সদস্য সুভাষ চাঁদ তোমরের মৃত্যুর কারণ নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে (আরএমএল) দুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীদের আঘাতের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকদের দাবি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুদিন পর মারা যান সুভাষ। তাঁর শরীরে কোনো কাটাছেঁড়া বা পোড়ার দাগ ছিল না। তাঁর মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে। একই দাবি করেছে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি। সুভাষ হত্যার দায়ে এ দলের বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তবে দিল্লি পুলিশের প্রধান নীরজ কুমার জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই এসব বিরোধ মিটে যাবে।
দিল্লির সফদারজং হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ধর্ষণের শিকার তরুণীর শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। যদিও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে এখনো কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। গত মঙ্গলবার এক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয়বারের মতো তাঁর জবানবন্দি নেন। প্রথম জবানবন্দিতে পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ ওঠার পর আবারও ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলা হলো। গত ১৬ ডিসেম্বর চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী (২৩)। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে ইতিমধ্যেই আটক করেছে পুলিশ।
ধর্ষণের ঘটনা এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশের তৎপরতায় কোনো ঘাটতি আছে কি না তা তদন্তে গতকাল একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে গতকাল চিদাম্বরম বলেন, 'এ জঘন্য অপরাধে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং শাস্তির ব্যবস্থা করব আমরা। এ সংকট (ধর্ষণ) স্থায়ী সমাধানের পথও খুঁজে দেখা হবে। দিল্লিতে যা হয়েছে তা লজ্জাজনক।' কমিশনের প্রতিবেদনে দিল্লিকে নারীদের জন্য আরো নিরাপদ করে তোলার ব্যাপারেও পরামর্শ দেওয়া হবে। চিদাম্বরম আরো বলেন, এই কমিশন পুলিশের তরফ থেকে কোনো গাফিলতি হয়ে থাকলে তাও খুঁজে বের করবে। গাফিলতির কারণে ইতিমধ্যেই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক-জনপথ থেকে পুলিশের কড়াকড়ি গতকাল অনেকটাই তুলে নেওয়া হয়। ইন্ডিয়াগেট ও রাইসিনা হিলের রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বন্ধ পাতাল রেলস্টেশনগুলোও গতকাল খুলে দেওয়া হয়। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, হিন্দুস্তান টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.