ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্যাসসংকট-জনদুর্ভোগ অবসানে আন্তরিক হোন

রাজধানীর অনেক এলাকায় রাতে সামান্য পরিমাণে গ্যাস পাওয়া গেলেও দিনের বেলায় চুলা প্রায় জ্বলে না বললেই চলে। বাধ্য হয়ে গৃহিণীদের খুব ভোরে উঠে কিংবা রাত জেগে পরের দিনের রান্না সারতে হয়।
আর যাঁরা তা না পারেন, তাঁদের নির্ভর করতে হয় বাইরের খাবারের ওপর। অনেকে ঘরে কেরোসিনের চুলা জ্বালাতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু দুর্মূল্যের কেরোসিন দিয়ে রান্না করার মতো সামর্থ্য নিম্নবিত্তের অনেকেরই নেই। শুধু রাজধানী নয়, বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও চলছে একই অবস্থা। আর শুধু গ্যাসের সংকটই নয়। এই শীতে এসি, ফ্যান চলে না বলে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত লোডশেডিং চলছে। কিছুদিন পরই শুরু হচ্ছে বোরো মৌসুম। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এমন কোনো আহামরি উন্নতি হবে না, সেটা ধরেই নেওয়া যায়। বিদ্যুতের সংকট হলে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোয় পানির সংকটও হবে অবশ্যম্ভাবী। এর মধ্যেই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়। সম্ভবত একেই বলে, 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'।
সামনে নির্বাচন। ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সবাই। এদিকে দেশের বেশির ভাগ দরিদ্র মানুষ যে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করতে পারছে না, গ্যাসের অভাবে রান্না করতে পারছে না, অসুখ-বিসুখে সামান্য চিকিৎসাসেবাও পাচ্ছে না, কদিন পরই বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকার ঘরে গরমে পচতে হবে, পান করার মতো পানিও পাওয়া যাবে না, বোরো জমিতে সেচ বিঘ্নিত হবে- এসব দিকে খেয়াল করার মতো অবস্থায় কি আছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা? জনগণ কি এমন প্রত্যাশা নিয়ে মহাজোট সরকারকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছিল? সরকার জনগণের আশু সমস্যাগুলোকে দ্রুততম সময়ে মোকাবিলা করবে- এমন প্রত্যাশাই ছিল মানুষের। কিন্তু তাঁরা আশাহত হয়েছেন। তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। অথচ বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, এই অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা গেলে এবং কম্প্রেসার লাগিয়ে বিদ্যমান সঞ্চালন লাইনেই সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো গেলে বর্তমান গ্যাসসংকট অনেকটাই কেটে যাবে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বড় কর্তারা কি এত ছোট কাজে মনোযোগ দেবেন? তাঁরা যে সেই মনোযোগ দেননি, সেটা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
মহাজোটের প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা স্থাপন করে বিগত নির্বাচনে মানুষ বিপুল ভোটে তাদের বিজয়ী করেছিল। তারা সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ করেছে, আগামী নির্বাচনের আগে মানুষ সেটি মূল্যায়ন করবেই। আমরা আশা করি, নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে হলেও সরকার তাদের শেষ বছরে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির মতো মানুষের প্রধান চাহিদাগুলোর অভাব পূরণ করতে আরো বেশি আন্তরিক হবে।

No comments

Powered by Blogger.