এনসিটিবিতে দুর্নীতি-সরিষার ভূত তাড়াতে হবে

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সট বুক বোর্ড) এনসিটিবি নিয়ে একটি হতাশাজনক খবর প্রকাশিত হয়েছে শুক্রবারের সমকালে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু ভালো উদ্যোগের জন্য এনসিটিবির কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে।
বিশেষত, বছরের শুরুতে দেশের সব স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার সফল উদ্যোগের পর অনেকেই এনসিটিবিকে নিয়ে আশান্বিত হয়েছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেশকিছু শুভ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অনেকগুলোই সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। ফলে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে প্রশংসিত হয়েছে। পাশাপাশি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতির নানা খবরও সময়ে সময়ে আলোচনায় এসেছে। ভুক্তভোগীদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে জনমনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, দুর্নীতির শিকড় এখানে এতটাই গভীরে প্রোথিত যে, মন্ত্রণালয় পরিচালনার উচ্চতর স্তরে কিছু মানুষের সততা ও আন্তরিকতা থাকলেও সর্বব্যাপ্ত দুর্নীতি থেকে রেহাই পাওয়া সহজ নয়। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দুর্নীতি দূরীভূত করার কিছু উদ্যোগ জারি আছে। অনেকেই মনে করেন, এ উদ্যোগগুলো যথেষ্ট নয়। দুর্নীতি দূর করার জন্য একটি জোরদার শুদ্ধি অভিযান চালানো উচিত। একটি শুদ্ধি অভিযানের কথা নিশ্চয় সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিশেষ বিবেচনায় রাখবেন। কেননা, একটি দুর্নীতিগ্রস্ত কাঠামোর মধ্যে তাগাদা দিয়ে কিছু ভালো উদ্যোগের বাস্তবায়ন সম্ভব হলেও ধারাবাহিকভাবে ভালো ফল পেতে হলে একটি ভালো কাঠামোই গড়তে হবে। শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থ জড়িত। এখানে শিক্ষার্থীদের যদি ভুল বই পড়তে হয়, শিক্ষকদের যদি কাজ আদায় করতে বা চাকরি পেতে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিতে হয়, শিক্ষালয়গুলোকে যদি নাজেহাল হতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে, তবে শিক্ষা কার্যক্রমে তার প্রভাব পড়বেই। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দূষণ বিদ্যালয় পর্যন্ত পেঁৗছবেই। তাই ওপরের দূষণ সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমের স্বার্থেই বন্ধ করা দরকার। এক্ষেত্রে এনসিটিবি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান। শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ ও বিতরণের দায়িত্ব তাদের হাতে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও নানা সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের আগে গুদামে অগি্নকাণ্ড ঘটার পর কেউ কেউ অভ্যন্তরীণ নাশকতার অভিযোগও তুলেছিলেন। অথচ সে ঘটনায় কেউ আজও শাস্তি পায়নি। এনসিটিবির সর্বশেষ খবর হলো, বই ছাপার ক্ষেত্রে, কাগজ কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি। জানা গেছে, একটি প্রকাশনা সংস্থা শুধু মলাট ও ইনার বদলে আগের বছরে ছাপা বই এনসিটিবিকে দিলেও কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সে বই বিতরণ করা হয়েছে। এখন প্রকাশনা সংস্থার জালিয়াতি ধরা পড়ায় তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে এনসিটিবির কিছু কর্মকর্তা। কাগজ কেনা, প্রকাশনা সংস্থার কাছে কাগজ বিতরণের ক্ষেত্রে শুভঙ্করের ফাঁকি লক্ষণীয়। সমকালের বিস্তারিত প্রতিবেদনে এনসিটিবির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা গুরুতর। বোঝা যাচ্ছে, এসব ঘটনার জন্য শুধু মুনাফালোভী প্রকাশনা সংস্থাগুলোই দায়ী নয়। এর সঙ্গে এনসিটিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংযোগ আছে। প্রকাশনা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করার একটি ব্যবস্থা চালু আছে প্রতিষ্ঠানটিতে। এটি কোনো অবস্থাতেই সুস্থ কোনো চর্চা নয়। এর জন্য অতীতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা কার্যক্রমকে ভুগতে হয়েছে। ভবিষ্যতেও যে ভুগতে হবে না সে নিশ্চয়তা নেই। ফলে এই দুর্নীতির উৎস বের করে এর প্রতিবিধান করতে হবে। এবার সংস্করণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি পুস্তক প্রকাশের সঙ্গে যেসব গভীর দুর্নীতি জড়িয়ে আছে সেগুলোকে উৎপাটনের ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে এনসিটিবির মধ্যে গজিয়ে ওঠা সরিষার ভূত তাড়াবার জরুরি ব্যবস্থা এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

No comments

Powered by Blogger.