ঢাকার জলাবদ্ধতা-চাই কর্মপরিকল্পনা ও সদিচ্ছা

গতবারের দুর্বিষহ জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা কি এবারও ঢাকা মহানগরবাসীকে পোহাতে হবে? গত বৃহস্পতিবার মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের ফলে নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায় ও মানুষ চলাচলে যে ধরনের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়, তাতে এ ধরনের আশঙ্কা স্বাভাবিক।
মাত্র ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ও পাড়ায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামনে বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ষোলোআনা। সে সময় গোটা মহানগরীই কার্যত পানিতে সয়লাব হয়ে যেতে পারে। অথচ নগরীর কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর তৎপর হলে এবং এ ব্যাপারে কার্যকর আগাম ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা দুরূহ নয়। নগর পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় উন্মুক্ত জায়গার অভাব, জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সব জায়গায় পুরোপুরি সচল না থাকা ও কতক ক্ষেত্রে ময়লা-আবর্জনা জমে বুুজে যাওয়া, লেকগুলো নিয়মিত খনন করে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা না থাকা, সর্বোপরি রাজধানীকে বেষ্টনকারী রক্ষা বাঁধের ভেতর জমা পানি সময়মতো বাইরে ঠেলে দেওয়ার ব্যবস্থা পুরোপুরি কাজ না করায় রাজধানীতে জলাবদ্ধতা এখন বিধিলিপি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু পরিকল্পনার অধীনে অতি সহজেই রাজধানীর মধ্যকার লেকগুলোকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রয়োজনীয় খননকাজ করে নাব্য করতে পারে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়মিত পরিষ্কার ও সচল রেখে পানির প্রবাহকে বাধাহীন করা যায়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সঙ্গে সংযুক্ত পাম্পগুলোর সামনের উন্মুক্ত স্থানকে রক্ষা করা এবং শহরের প্রতিটি চ্যানেল দিয়ে পানিপ্রবাহ পাম্প পর্যন্ত পেঁৗছানো বাধাহীন করলে বন্যার সময়ও রাজধানীকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখা যায়। তদুপরি হাতিরঝিলের মতো প্রাকৃতিক জলাধারগুলোকে দখলদারমুক্ত ও রক্ষা করার মাধ্যমেও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে অগ্রগতি অর্জন করা যায়। রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সরকারের বিরাট অঙ্কের অর্থ খরচের প্রয়োজন নেই। এ জন্য চাই সঠিক কর্মপরিকল্পনা ও সদিচ্ছা।

No comments

Powered by Blogger.