এসো মা লক্ষ্মী by সৌম্য দেব

আগামী সোমবার লক্ষ্মীপূজা। ধনদৌলতের দেবী তিনি। শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার পরপরই পূর্ণিমা তিথিতে দেবীর পূজা হয়। ঘরে ঘরে আরাধনা করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে সম্পদ বৃদ্ধি করে


চলা। ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই রয়েছে। তবে প্রায় সবার অভিন্ন প্রত্যাশা আগের চেয়ে ভালো থাকার। কিছু কিছু লোক নিজের সম্পদ বাড়াতে গিয়ে অন্যের ওপর জুলুম করে। শোষণ চালায়। সব ধর্মাবলম্বীর ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। লক্ষ্মীর আরাধনা যারা করেন তাদের সবার ভাগ্যের পরিবর্তন এক রকম ঘটে না। কারও কপালে বেশি জোটে, কারওবা কম। একেবারে হতদরিদ্ররাও জীবনটা বদলাতে চান। তাদের আরাধনায় কোনো ফাঁকফোকর থাকে না। দেবীকে ডাকেন মনপ্রাণ দিয়ে। এবারের লক্ষ্মীপূজার দিনেও ডাকবেন। এ লেখার সঙ্গের ছবির দেবীমূর্তিতে রঙ করছেন যে নারী, তিনিও নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম হবেন না। প্রতি বছরেই তেমনটি করেন। যেমন করেন তার পেশায় নিযুক্ত অন্যরা। বরিশালের উত্তর সিহিপাশা এলাকায় কুমারপাড়ায় তাদের বসবাস। এক সময়ে এ পাড়া ছিল দারুণ জমজমাট। একদল বানাত দেব-দেবীরর্ মূির্ত। আরেক দল গৃহ ব্যবহার্য নানা সামগ্রী_ রান্নার পাতিল, পানির কলসি, খাবার থালা, ধান-চাল রাখার ছোট-বড় মটকি। আরও তৈরি হতো পুতুল। দেশের আরও অনেক স্থানেও ছিল পালপাড়া। কিন্তু সময়ের কাছে তারা হেরে যাচ্ছেন। দেব-দেবীর মূর্তির চাহিদা কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে। বাংলাদেশে এক সময়ে মোট জনসংখ্যার ত্রিশ শতাংশের বেশি ছিল এ ধর্মের অনুসারী। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে এখন তা দশ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এনামেল-এলুমিনিয়ামের দাপটে মাটির তৈজসপত্রের চাহিদাও কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। কুমারদের পাড়াগুলো তাই জৌলুস হারিয়ে ফেলছে। তারা লক্ষ্মীর আরাধনা করে ঠিকই, কিন্তু নিজের ঘরে লক্ষ্মী প্রবেশ করে কোথায়!
এ দেবীর পূজার দিনে হিন্দু নারীরা আলপনা অঁাঁকবেন ঘরের দুয়ারে। পথেই যে আসবেন সৌভাগ্যের লক্ষ্মী। ফুল-নৈবেদ্য সাজিয়ে ডাকবেন দেবীকে। অনেকের বাসায় থাকবেন পুরোহিত। কিন্তু সব পরিবারের পক্ষে কিন্তু এখন আর পুরোহিত ডাকা সম্ভব হয় না। প্রথমত, পূজার সংখ্যা অনেক_ ঘরে ঘরে দেবীর আবাহন। একদিনে এত পুরোহিত মিলবে কোথায়? আরেকটি কারণ, পুরোহিতের সংখ্যাল্পতা। দেশত্যাগ একটি কারণ। আরেকটি কারণ_ নতুন প্রজন্মের সদস্যদের অনেকে পুরোহিতের পেশায় আসতে আগ্রহ দেখায় না। এ প্রবণতা রাতারাতি বদলে যাবে, এমন সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে আছে বলে মনে হয় না। তারা বরং এমন পেশায় যুক্ত হতে চাইছে যাতে লক্ষ্মী দেবী অবলীলায় ঘরে চলে আসতে পারেন। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী কিংবা এ ধরনের পেশার হাতছানি তো রয়েছেই। হাল আমলের ক্রেজ বিবিএ-এমবিএ কিংবা তথ্য-প্রযুক্তি। ব্যবসা-বাণিজ্য তো আছেই। কৃষি কাজ করেও কিন্তু সচ্ছলতা আসে। এসব পথে যারা চলতে চায় তাদের প্রতি দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ না থাকার কোনো কারণ নেই। পরিবারে পরিবারে যদি কেবল মূর্তি সামনে রেখে ফুল-নৈবেদ্য পূজা হয়, তাতেও দেবী বিমুখ হবেন বলে মনে করার কারণ নেই। এ লেখার ছবিতে দেবীমূর্তি রঙ করছেন যে নারী, পাশে রয়েছে শিশুসন্তান। এ শিশুটি যখন বড় হবে তখন কি মায়ের পেশা বেছে নেবে? সেটা জানা নেই। কিন্তু তার ঘরেও লক্ষ্মী আসুক, এটাই প্রার্থনা।
 

No comments

Powered by Blogger.