শুক্রবার দেশের ৯ জেলায় পালিত হচ্ছে ঈদ-উল-আযহা

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শুক্রবার বাংলাদেশের ৯টি জেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ ঈদ-উল-আযহা পালন করছেন। উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে ওইসব গ্রামে। আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

চাঁদপুর : চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার ৩০টি গ্রামে ঈদ-উল- আযহা পালিত হচ্ছে । প্রায় ৮০ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসব পালন করে আসছেন এসব গ্রামের মানুষ।
জানা যায়, চাঁদপুরে হানাফি মাযহাব অনুসারী ৩০টি গ্রামের কম বেশি  ১৫ হাজার লোক আগাম পবিত্র ঈদুল আযহা পালন করেন। ১৯২৮ সাল থেকে ওইসব গ্রামের লোকজন সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ইসলাম ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন।

হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামের মাওলানা ইছহাকের মৃত্যুর পর তার জীবিত ৬ ছেলে মতবাদের প্রচার চালাচ্ছেন। হাজিগঞ্জের সাদ্রা গ্রামের সাদ্রা হামিদিয়া মাদরাসার পিন্সিপাল মরহুম পীর সাহেবের বড় ছেলে আবু যোফার মোহাম্মদ আবদুল হাই সাদ্রাভী। কয়েকশত মুসল্লি ওই জামাতে অংশ নেবেন। ঈদ-উল- আযহা উপলক্ষে সাদ্রা হামিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে মেলা বসে।

চাঁদপুর যেসব গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আগাম ঈদ পালিত হচ্ছে-হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, মনিহার, ঝাকনি, প্রতাপপুর, দক্ষিণ বলাখাল, বাসারা। ফরিদগঞ্জ উপজেলার-উভারামপুর, উটতলী, মুন্সিরহাট, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচর, বালিথুবা, কাইতাড়া, নুরপুর, সাচনমেঘ, ষোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর, চরদুখিয়া, মতলবের দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী, এবং শাহরাস্তি উপজেলার কয়েকটি গ্রাম।

বরিশাল: বরিশালে আগাম ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করছেন বিভাগের কয়েক লাখ মানুষ।

শুক্রবার সকালে ঈদ-উল-আযহার নামাজ আদায় শেষে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পশু কোরবানী দিয়েছেন।

এরা সবাই চট্টগ্রামের চন্দনাইশ কাঞ্চন নগর এলাহাবাদ জাহাগিরিয়া শাহ্সুফি দরবার শরীফের অনুসারী। বরিশাল বিভাগে ওই তরিকার প্রধান মসজিদ নগরীর ২৩নং ওয়ার্ড তাজকাঠী হাজী বাড়ি এলাকায়।

সকাল ৯টায় ওই মসজিদে (জাহাগিরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদ) ঈদ-উল-আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করেন।

পরে মসজিদের সামনে পশু কোরবানী দেওয়া হয়।

জাহাগিরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন বলেন, “পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে এবং মক্কা নগরীর সাথে মিল রেখে তারা ঈদ উদযাপন করে থাকেন।”

বরিশাল বিভাগে জাহাগিরিয়া শাহ্সুফি দরবার শরীফ অনুসারীদের ৭৫টি মসজিদ রয়েছে। প্রতিটি মসজিদে শুক্রবার ঈদ-উল-আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ভোলা: সারাদেশের মুসলমানরা শনিবার ঈদ পালন করলেও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শুক্রবার ভোলার ৫ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার লোক পবিত্র ঈদ-উল- আযহা পালন করেছেন।

সুরেশ্বর দরবারে পীর ও সাতকানিয়া অনুসারীরা পৃথক পৃথকভাব জেলার ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও তজুমদ্দিন উপজেলায় একদিন আগে আগাম ঈদ পালন করে।

শুক্রবার সকাল ৯টা জেলার বোরহানউদ্দিনের মুলাইপত্তন গ্রামের মজনু মিয়ার বাড়ির দরগায়  ঈদের বৃহৎ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কয়েকশ মানুষ শরীক হন।

এছাড়াও পর্যায়ক্রমে সকাল সাড়ে ৯টায় চৌকিদার বাড়ি, পঞ্চায়েত বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট মেলা বসেছে। ঈদুল আযহা পালন করা ওই সব পরিবারের মধ্যে আনন্দের ঢল নেমেছে।

সুরেশ্বর দরবারে পীরের মুরিদ মো. মজনু মিয়া জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা পালন করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: অন্যবারের মতো এবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জ উপজেলার দু’টি স্থানে পবিত্র ঈদ-উল আযহা পালিত হচ্ছে।

শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কাইযুমপুর আম বাগান মাঠে এ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ জামাতে ইমামতি করেন মাও. মো. জারজেস আলী।

ঈদ পালনকারী মুসল্লি মাও. তৌফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তারা প্রায় ১১টি গ্রামের ৪৫টি পরিবার ঈদ পালন করছেন।

অন্যদিকে, শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামেও ঈদ পালিত হয়েছে।

পারদিলালপুর,শাহাবাজপুর,সন্যাসি,ধোবড়া,চাঁদপুর,গোয়াবাড়ী,ভোলামারী,কয়লাদিয়ার,সোনামসজিদ ও মুসরিভুজা গ্রামে ঈদ পালিত হচ্ছে।

এছাড়া শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্ক্তি ইউনিয়নের নাধড়া এলাকায় প্রায় ৫০ জন পুরুষ ও নারী এ ঈদ পালন করছেন। নাধড়ায় ঈদের জামাতে ইমামতি করেন আবুল কালাম আজাদ।

দিনাজপুর: সৌদি আরবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দিনাজপুরের বিভিন্নস্থানে শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আযহা পালিত হয়েছে।

দিনাজপুরের সদর, কাহারোল এবং চিরিরবন্দর উপজেলায় কয়েকটি গ্রামের মানুষ ঈদুল আযহা পালন করেন।
শুক্রবার সকাল ৮টায় দিনাজপুর শহরের ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এই জামাতে শতাধিক মুসল্লি অংশ নেয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা হাবিবুর রহমান।

এদিকে, একই সময়ে কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর, রসুলপুরসহ চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর এবং সাইতাড়া গ্রামে রাবার ড্যাম মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।

ঝিনাইদহঃ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শুক্রবার সকালে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শহরে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন একদল মুসল্লি।

হরিণাকুণ্ডু শহরের চাষিপাড়ার জনৈক নুরুল ইসলামের বাড়িতে হাফেজ দোলোয়ার হোসেন শামিমের ইমামতিতে শতাধিক মসুল্লি ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন।

হরিণাকুণ্ডু ছাড়াও শিঙ্গা, শিতলী, ভালকী ও পায়রাডাঙ্গাসহ ১২ গ্রামের মানুষ  ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেন।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে শহরের চাষিপাড়ায় জনৈক নুরুল ইসলামের বাড়িতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মাদারীপুর: বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে হযরত সুরেশ্বরী (রাঃ) এর মাদারীপুরের ৫০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রায় দেড়শ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শুক্রবার ঈদ-উল-আযহা পালন করছেন।

শরিয়তপুর দ্বায়রা শরীফের মাদারীপুর জেলার প্রধান খাদেম ও পাঁচ খোলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মোল্লা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা, চরকালিকাপুর, তাল্লুক, জাজিরা, মহিষেরচর, জাফরাবাদ, বাহেরচরকাতলা, চরগোবিন্দপুর, আউলিয়াপুর, ছিলারচর, কুনিয়া, মস্তফাপুর, কালকিনির সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, আলীনগর, বাঁশগাড়ী, খাসেরহাট, আউলিয়াপুর, রামারপোল, ছবিপুর, ছিলিমপুর, ক্রোকিরচর, সিডিখান, কয়ারিয়া, রমজানপুর, বাটামারা, রাজারচর, শিবচরের পাচ্চর, স্বর্ণকারপট্টিসহ মাদারীপুর জেলার ৪টি উপজেলার ৫০ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শুক্রবার উদ-উল-আযহা পালন করছেন।

তিনি আরও জানান, ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে মাদারীপুর সদর উপজেলার চরকালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ও কালকিনির আন্ডারচর খানকায় শরীফ মাঠে সকাল ৯টায় ঈদের বৃহৎ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুরের আন্ডারচর ও কয়ারিয়া গ্রামসহ অন্তত ২০টি গ্রামে সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এসব জামাতে প্রায় ৫০ হাজার মুসল্লি অংশ নেন।

পটুয়াখালী: শুক্রবার পটুয়াখালী জেলার ২৫ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মুসলমান সৌদি আরবের সঙ্গে সংগতি রেখে পবিত্র ঈদুল আযহা পালন করছেন।

বিভিন্ন পীরের অনুসারী ভক্তরা  ঈদ পালন করছে।

গলাচিপার পশুরিবুনিয়া ও খাল গোরা জামে মসজিদ এবং কলাপাড়ার দনি লালুয়া জামে মসজিদ, নিশানবাড়িয়া জামে মসজিদ ও ধানখালী দায়রা মসজিদ, বাউফলের মদনপুরার চন্দপাড়া জামে মসজিদ, বগা এলাকার সাবুপুরা জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় এবং পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরীপে সকাল সাড়ে ৯টায় কোরবানীর ঈদের নামাজের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরীপে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন পীরজাদা আলহাজ হাফেজ ক্বারী মাওলানা মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ রব্বানী।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর দরবার শরীফের ভক্তরা ও মুরিদানরা  সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শুক্রবার ঈদ-উল- আযহা পালন করেছেন।

সুরেশ্বর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ জান শরীফ শাহ সুরেশ্বরী ওরফে মাওলানা আহাম্মদ আলীর আমল থেকে চন্দ্র মাস গণনা স্বাপেক্ষে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এ দরবারে ঈদ পালন করা হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সকাল সাড়ে ১০টায় দরবার মাঠে ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাতে ঈমামতি করেন সুরেশ্বর দরবার শরীফের গদীনশীন পীর শাহ বেলাল ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন মোত্তাওয়ালী সৈয়দ শাহ নূরে কামাল।

No comments

Powered by Blogger.