লাব্বাইক লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়াননি'মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক, লা শারিকা লাকা'- এই ধ্বনিতে গতকাল বৃহস্পতিবার মুখরিত হলো আরাফাতের ময়দান।


এর অর্থ হলো- 'আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয় সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার, তোমার কোনো শরিক নেই।'
এভাবে তালবিয়া পড়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান (হাজি) গতকাল মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা আরাফাতের ময়দানে ছিলেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করেন।
মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখ। হজের তিন ফরজের মধ্যে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি হচ্ছে হজ। 'হজ' শব্দের আভিধানিক অর্থ 'ইচ্ছা করা'। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশ থেকে এবার প্রায় ২২ লাখ মুসলমান হজ পালন করছেন। বাংলাদেশ থেকে যান এক লাখ ১১ হাজার ২৭৯ জন হাজি। তাঁদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুই হাজার ৯৮০ জন এবং অন্যরা যান বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
হজের আহকাম পালনের লক্ষ্যে হাজিরা গত মঙ্গলবার ফজরের নামাজের পর মক্কা থেকে কেউ গাড়িতে, কেউ পায়ে হেঁটে মিনায় পৌঁছান। আরাফাতের ময়দানে যাওয়ার এক দিন আগে মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুন্নত। এই সুন্নত আদায় করতে হজের এক দিন আগে মিনায় যান হাজিরা। এরপর ৯ জিলহজ (বাংলাদেশে ৮ জিলহজ) 'অকুকে আরাফাহ' অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন তাঁরা।
গতকাল আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন হাজিরা। তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে পাঁচ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন। রাতে সেখানে অবস্থান করেন খোলা মাঠে। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করেন সেখান থেকে।
মুজদালিফায় আজ ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া করে) গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরো কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে 'সায়ি' (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। সেখানে আরো এক বা দুই দিন অবস্থান করে হজের অন্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করবেন। মিনার কাজ শেষে আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর যাঁরা মদিনায় যাননি, তাঁরা মদিনায় যাবেন। যাঁরা আগে মদিনায় গেছেন, তাঁরা নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।

No comments

Powered by Blogger.