পদ্মা সেতুর ডামাডোল এবং ঢাকা নগরীর অবস্থান by গাজীউল হাসান খান

আমি যখন লন্ডনের সেন্ট প্যাঙ্কারাস স্টেশন থেকে দ্রুতগামী ট্রেন 'ইউরো স্টারে' করে ইংলিশ চ্যানেলের নিচ দিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টায় প্যারিস পৌঁছালাম, ঠিক তখনই খবরটা শুনতে পেলাম। কথায় কথায় এক বন্ধু বললেন, আজ একটি ফরাসি পত্রিকায় দেখলাম, চলতি বছর বিশ্বে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে


আমাদের ঢাকা। সারা বিশ্বের ১৪০টি দেশের বিভিন্ন শহর-নগরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান এখন তালিকার সর্বনিম্নে গিয়ে ঠেকেছে। রোজার আগে ঢাকা থেকে লন্ডনে এসেছি, সুতরাং তেমন একটি খবরে মোটেও বিস্মিত হইনি আমি। তা ছাড়া আগে থেকেই আমি জানতাম, গত বছর ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৯ নম্বরে। তারপর গত এক বছরে ঢাকার জনসংখ্যা আরো বেড়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে আরো অধঃপতন ঘটেছে পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থার। মাছি-মশার মতো বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন বাড়ছে রিকশার সংখ্যা। এ যেন যত মানুষ তত রিকশা। তাতেও যেন চাহিদা মিটছে না। ফুটপাতগুলো দখল করে ঈদের কেনাকাটার জন্য বন্দোবস্ত দিয়ে দিচ্ছিল বিভিন্ন এলাকার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। বন্ধুকে বললাম, বানে ভাসা খড়কুটোর মতো গ্রামগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকায় কর্মসংস্থানের আশায় ছুটে আসছে বেকার জনগোষ্ঠী। আবার কেউ আসছে লেখাপড়ার জন্য, কেউ ভালো চিকিৎসা কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের ধান্দায়। রাজধানী ঢাকায় ক্রমবর্ধমান এ জনসংখ্যার চাপের মধ্যে গত ৪০ বছরে পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন তুলনামূলকভাবে তেমন কিছুই হয়নি বলা চলে। ঢাকায় এরশাদ সরকার নির্মিত যোগাযোগ সড়ক 'পান্থপথ' এবং বিএনপি সরকার নির্মিত দুটি অতি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার ছাড়া আর কিছুই ঘটতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে সর্বশেষ ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ শুধু 'এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে' ও 'মনোরেলের' কথা শুনিয়েই চার বছর পার করে দিয়েছে। এখন পদ্মা সেতুর ডামাডোলে বাকি সময়টাও পার হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে না সরাতে পেরেছে বিভিন্ন পোশাক প্রস্তুতকারী কম্পানি কিংবা চামড়াজাত শিল্পের কারখানাগুলো এবং না পেরেছে শহর থেকে রাসায়নিক বস্তুর গুদামগুলোকে অন্যত্র নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর করতে। সামনে আসছে নির্বাচন, সে কারণে ভোট হারানোর ভয়ে ক্ষমতাসীন সরকার কাউকে স্পর্শ করবে বলে মনে হচ্ছে না।
আমরা যখন প্যারিসের (পাঁরী) আভেঁন্যু দে সাঁজেলিজেতে পৌঁছেছি, নগরীতে তখন সন্ধ্যা নেমেছে। আলোকনগরী প্যারিসকে তখন সত্যিই অপরূপা বলে মনে হচ্ছিল। আভেঁন্যু দে সাঁজেলিজের লুভর প্রাসাদের অপর প্রান্তে রয়েছে বিজয় তোরণ 'আর্ক দ্য ত্রিয়ম্ফ', যেখানে নগরীর বিভিন্ন দিক থেকে ১২টি সড়ক এসে মিলিত হয়েছে। একসময় নেপোলিয়ন বোনাপার্টের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সে বিজয় তোরণটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তা থেকেই বোঝা যায়, কত পরিকল্পিতভাবে সে নগরীকে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে নেপোলিয়নদের বহু আগে অর্থাৎ ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে ফরাসি শাসক চতুর্দশ লুই তাঁর রাজধানী 'পাঁরীকে' মনের মতো করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরে তৃতীয় নেপোলিয়ন ১৮৫২ সাল থেকে প্যারিসের সামগ্রিক উন্নয়নের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ফরাসি দেশের মহান সাহিত্যিক ও দার্শনিক ভল্তেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮) তাঁর এক বিখ্যাত রচনায় লিখেছেন, মৃত্যুর পর তিনি স্বর্গে যেতে চান না, পাঁরীই তাঁর ভূস্বর্গ। অস্কার ওয়াইল্ডসহ ইউরোপীয় বহু সাহিত্যিকও প্যারিসকে পশ্চিমা সভ্যতার ফোয়ারা বলে উল্লেখ করেছেন। আবার কেউবা বলেছেন, প্যারিস চিরকালই ভূস্বর্গ বলে বিবেচিত হবে। বিশ্বের শিল্পকলার কেন্দ্র হিসেবে প্যারিসের বয়স কখনোই তাকে বুড়িয়ে যেতে দেবে না। সত্যিকার অর্থেই প্যারিস তিলোত্তমা। লন্ডনের মতো প্যারিস নগরীতেও প্রায় দুই হাজার বছর আগের বহু স্থাপনা খুঁজে পাওয়া যায়। তবুও এ নগরী দুটো যুগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে সভ্যতার নতুন পথে। তাই হয়তো ইংরেজ মনীষী স্যামুয়েল জনসন ১৭৭৭ সালে লিখেছেন, 'তুমি বুদ্ধিবৃত্তিক এমন কোনো মানুষ পাবে না যে কখনো লন্ডন ত্যাগ করে যেতে চাইবে। যদি কোনো মানুষ লন্ডনের ব্যাপারে কখনো উৎসাহ হারিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে সে জীবন সম্পর্কেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া এখনো দেখা যায় যে দুই হাজার বছরের পুরনো লন্ডন নগরীতে সাম্প্রতিক অলিম্পিক গেমস কোনো অপ্রত্যাশিত ভিড়, যানজট সৃষ্টি কিংবা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘি্নত করতে পারেনি। জাতীয় বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ নগরী যুগে যুগে সমৃদ্ধ ও যুগোপযোগী করা হয়েছে।
দারিদ্র্য কিংবা অর্থনৈতিক সংগতি কখনোই একটি সমৃদ্ধ বা উন্নত নগরী গড়ে তোলার স্বপ্নকে পর্যুদস্ত করতে পারবে না। তার জন্য প্রয়োজন মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তিক একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। সে সময়োপযোগী পরিকল্পনার অভাবে চার শ বছরের 'মোগল রাজধানী নগরী ঢাকা' এখন বসবাসের উপযোগিতা হারিয়ে ফেলেছে। অপরিকল্পিত গৃহায়ণ, নদী ও সরকারি জায়গা দখল, খাল-বিল ভরাট করা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও রাস্তাঘাটের অভাব, অসহনীয় যানজট, ফুটপাত দখল, বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে পানি ও বায়ুদূষণের কারণে রাজধানী ঢাকায় এখন স্বাভাবিক চলাফেরা নয়, সুস্থ জীবনযাপনও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরও সারা দেশে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়ন, বিশেষ করে কর্মসংস্থানের অভাবে সহায়সম্বল এবং উপায়হীন মানুষ রাজধানী ঢাকার দিকে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের কর্মহীন মানুষ কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছে। সে কারণে ক্রমেই একবিংশ শতাব্দীর ঢাকা পরিণত হচ্ছে একটি রিকশার নগরীতে। পরিকল্পিত রাজধানী ঢাকা নগরী গড়ে তোলার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুব একটা সুযোগ ও সময় পাননি। এ ব্যাপারে শাসক হিসেবে পরিকল্পিতভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী নিজেকে প্রথম নিয়োজিত করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তারপর সীমিতভাবে ঢাকা নগরীর সমৃদ্ধির জন্য কিছু কাজ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তারপর অর্থাৎ নব্বইয়ের দশক থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা নগরীতে উন্নয়নের যে কাজ হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল অত্যন্ত সীমিত। যেসব কাজ করা হয়েছে, তাকেও অত্যন্ত পরিকল্পিত বলা যায় না। কাজের চেয়ে দুর্নীতি হয়েছে বেশি। সবশেষে নাগরিক সমাজের চাপে পরিবেশ রক্ষা ও বৃহত্তর ঢাকা নগর উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজউক যে ৫৯০ বর্গমাইলব্যাপী (১৫৩০ বর্গকিলোমিটার) 'ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান' (ডিএপি) গ্রহণ করেছে, তা নিয়েও নানা বিতর্ক রয়েছে। তা ছাড়া এ ব্যাপারে সরকারের কোনো বিশেষ তাগিদ কিংবা অর্থ বরাদ্দ নেই। ফলে অপরিকল্পিত গৃহায়ণের কারণে নগরীর খাল-বিলসহ নদী ও বিভিন্ন জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে সরকারের গৃহীত নীতিগুলোও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তা ছাড়া নেই আইনেরও কঠোর বাস্তবায়ন। রাজধানীতে প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি যানবাহন চলাচল করে। বর্ধিত জনসংখ্যা ও যানবাহনের চলাচলের জন্য গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট। হয়নি পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন। হাইওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা মনোরেল ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। দেশে রাজনৈতিক বিবাদ, মিথ্যা আশ্বাস, ভাঁওতাবাজি ও রাজনীতিকদের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই দৃশ্যমান হয়নি। ফলে এত বছরেও সমাপ্ত হয়নি বেগুনবাড়ী খাল সংস্কার কিংবা গুলিস্তান-কাঁচপুর ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের 'বৈশ্বিক বসবাসের উপযোগিতা' শীর্ষক জরিপে ২০১২-তে ঢাকা ১৪০টি বিভিন্ন নগরীর মধ্যে সর্বনিম্ন স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন অনুষঙ্গে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে ঢাকা নগরী পেয়েছে মাত্র ৩৮ দশমিক সাত। এর মধ্যে রাস্তাঘাট ও পরিবহনগত অবকাঠামো বিনির্মাণের ক্ষেত্রে ঢাকা পেয়েছে শূন্য। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব, অসহনীয় যানজট, বাতাসে বিষ, নোংরা পানিসহ উপরোল্লিখিত কারণে ঢাকা এখন বিশ্বের একটি নিকৃষ্ট নগরী। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের রাজধানী মেলবোর্ন এবং ইউরোপের অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাকে যথাক্রমে বিশ্বের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ বাসোপযোগী স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। মেলবোর্নের বর্তমান জনসংখ্যা মাত্র ২৩ লাখ আর ভিয়েনার মাত্র ১৭ লাখ। অন্যদিকে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। অথচ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নগরী (আয়তনে) লন্ডনের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ এবং বৃহত্তর প্যারিসের এক কোটি ২২ লাখ। লন্ডন ও প্যারিসের যোগাযোগ এবং পরিবহন ব্যবস্থা এখনো বিশ্বের বিভিন্ন নগরীর তুলনায় প্রবাদতুল্য। এই দুই নগরীতে প্রতিবছর লাখ লাখ ভ্রমণকারী আসে অবকাশ যাপনের জন্য। পর্যটন এ দুটি নগরী এবং এমনকি মেলবোর্ন ও ভিয়েনার অন্যতম প্রধান জাতীয় আয়। ভিয়েনায় প্রতিবছর যে পরিমাণ পর্যটক আসে, এর তুলনায় এই নগরীর জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেক। মেলবোর্নের ক্রিকেট, টেনিস, কার রেইসিং ও পানিভিত্তিক স্পোর্টস (সেইলিং) এবং অন্যদিকে ভিয়েনার সংগীত জগৎ, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন কনসার্ট অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু লন্ডন ও প্যারিসের তুলনায় তারা এখনো সেসব ক্ষেত্রে সমসাময়িক কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেনি।
বাংলাদেশিদের কাছে ঢাকা অবশ্যই এখনো একটি জনপ্রিয় নগরী। এশিয়ার বিভিন্ন প্রাচীন নগরীর মধ্যে ঐতিহাসিক দিক থেকে ঢাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথাযথ উন্নয়ন, যুগোপযোগী অবকাঠামোগত বিনির্মাণ এবং সর্বোপরি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে এখনো ঢাকা নগরীকে বাসোপযোগী করা সম্ভব বলে নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন। এ বিষয়টি যেমন সব রাজনৈতিক দল, সরকার ও জনগণের কাছে অত্যন্ত গুরুত্ব পাওয়া উচিত, তেমনি অন্যান্যের মধ্যে বিশেষ করে পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বনায়ন সৃষ্টি, বায়ু ও পানির মান উন্নয়ন করাও অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। পদ্মা সেতুর ডামাডোলের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর বহুমুখী উন্নয়ন যেন কোনোমতেই ব্যাহত না হয় সেদিকে অবশ্যই অত্যন্ত অগ্রাধিকার ও গুরুত্বসহকারে এ মুহূর্তেই পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। নতুবা কাঙ্ক্ষিতভাবে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে ঢাকা নগরীর ওপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন চাপ আরো অনেক বেড়ে যাবে। সে অবস্থা, বিশেষ করে যথাযথভাবে নগরীর পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা না গেলে অচল ঢাকা নগরী ত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। অতিদ্রুত বিভিন্নভাবে প্রয়োজনীয় হাইওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার কিংবা মনোরেল স্থাপনের পাশাপাশি রেল ও বাস যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অত্যন্ত বিস্তৃত ও কার্যকর করতে হবে। ঢাকা নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট থেকে ধীরগতিসম্পন্ন রিকশার জটলা উঠিয়ে দিয়ে যাত্রী পরিবহনের জন্য দ্রুতগতিসম্পন্ন মাঝারি ধরনের পর্যাপ্ত বাস সার্ভিস চালু করতে হবে। তা ছাড়া নগরীর ফুটপাতগুলোকে যত কঠিনই হোক, সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করতে হবে পথচারী চলাচলের জন্য। প্রয়োজন হলে ফুটপাতের দোকানদারদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ভোটের দোহাই ও কোনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। ঢাকা নগরীর চারদিকের নদীগুলোকে করতে হবে অবৈধ দখলমুক্ত, নাব্যতাসম্পন্ন ও সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত। যাত্রী পরিবহনের জন্য সুপরিসর ও পানীয়জলের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, 'পাঁরী নগরীর স্যেন নদী একটি বিশাল রাজপথ, যা আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়।' সে নদীর ওপর তিনি চারটি সেতু নির্মাণ করেছিলেন। তা ছাড়া তাঁর উইলে লিখে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁকে যেন স্যেন নদীর তীরে সমাহিত করা হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছা পূরণ করা হয়েছিল। আমাদের দেশে তেমন দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন উন্নত রুচির নেতা গড়ে উঠবে কবে, যাঁরা ঢাকা মহানগরীকে নিয়ে, এর নদ-নদী, উন্নত জনপদ ও পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে নিরলস ও আপসহীনভাবে কাজ করে যাবেন? (লন্ডন থেকে)

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক gaziulhkhan@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.