নৌযান শ্রমিক ধর্মঘট মহাসঙ্কটে রূপ নিচ্ছেঃ জটিলতা নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ চাই

দেশব্যাপী নৌযান শ্রমিক ধর্মঘট গতকাল তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত ছিল। নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতির ফলে নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় যে স্থবিরতা নেমে এসেছে তার মাশুল এদেশের মানুষকে অনেকদিন ধরে গুনতে হবে। যাদের নৌপথ ছাড়া চলাচলের বিকল্প উপায় নেই তারা পড়েছে মহাসঙ্কটে। এদিকে নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটের সুযোগ নিয়ে যেসব রুটে নৌযানের পাশাপশি বাস চলাচল করে সেসব দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে অকারণে।

ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ যে চরমে উঠেছে একথা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। এ কর্মবিরতির ফলে পণ্যবাহী নৌযান সেক্টর পড়েছে মহাবিপর্যয়ের মুখে। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বহির্নোঙ্গরে বোঝাই করা আমদানি পণ্য নিয়ে অবস্থানরত ২৫টি বিদেশি মাদার ভ্যাসেল অলস বসে আছে। এতে দেশীয় লাইটার জাহাজ ও কার্গো জাহাজের প্রতিদিন তিন কোটি টাকা এবং আমদানিকারকদের পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এ হারে ডেমারেজ দেয়া হলে খুচরা বাজারে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়তে বাধ্য। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ধর্মঘটজনিত আর্থিক ক্ষতির বোঝা শেষপর্যন্ত ভোক্তাসাধারণের ঘাড়ে গিয়ে বর্তাবে।
নৌযান শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেছে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর দাবিতে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে তাদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত না হওয়ায় মালিক পক্ষ তার সুযোগ নিয়ে বেতন বাড়ানো থেকে বিরত থাকে। মালিক পক্ষ যুক্তি দেখাচ্ছে যে, তাদের ওপর ‘স্টিম রোলার’ চালিয়ে এই বাড়তি বেতন আদায় করা হয়েছিল। এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। শ্রমিকদের সঙ্গে যদি আলোচনায় বসতেও হয় তবে সে বৈঠক হবে ২০০৪ সালের বেতন কাঠামোর ভিত্তিতে।; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গৃহীত বেতন কাঠামোর ভিত্তিতে নয়। মালিকপক্ষ সে সঙ্গে একথাও বলছে যে, শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকে মহাবেআইনি কাজ করে ফেলেছে। তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কোনো আলোচনা হবে না। এদিকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী, যিনি নিজে একজন ডাকসাইটে পরিবহন শ্রমিক নেতা ছিলেন, বলছেন, শ্রমিকদের দাবি ন্যায্য হলেও ধর্মঘটটি বেআইনি। অপরদিকে ধর্মঘটী শ্রমিকরা বিনাশর্তে মুক্ত আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তাতে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে কার্গো জাহাজ মালিকরা তাদের এ প্রস্তাবে মৃদুভাবে হলেও সাড়া দিয়েছেন।
নৌ-পরিবহন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ খাত। এই খাত সচল থাকার ওপর যাত্রী ও পণ্যের সুষ্ঠু পরিবহন বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাই এ খাতে সামান্য জটিলতা দেখা দিলেও বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টির আগে সরকার তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে সরকার এমন দায়সারা ভূমিকা কেন নিল তা আমরা বুঝে ওঠতে পারছি না। নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মালিকদের পক্ষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে। সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছেন, তার অবস্থান আইনের পক্ষে। বেশ ভালো কথা; কিন্তু আইনে কি এই জটিলতার শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধানের কোনো পথ খোলা নেই! অতিদ্রুত সঙ্কটের সমাধান না হলে তা যে মহাসঙ্কটে পরিণত হবে, ব্যাপকতর দুর্যোগ ডেকে আনবে—এ সরল কথাটা কি আইনের পক্ষে অবস্থান নেয়া নৌ-পরিবহন মন্ত্রী বুঝছেন না? আমরা এ জটিলতা নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.