অতিরিক্ত লবণাক্ততার প্রভাব- মংলা এখন শস্যহীন বিপন্ন জনপদ by সুমেল সারাফাত

জলবায়ু পরিবর্তন এবং লবণাক্ত পানিতে চিংড়ি চাষ করায় বাগেরহাটের মংলা উপজেলায় ফসলের উৎপাদন কমতে কমতে এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে। কমে গেছে মিঠাপানির মাছ। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে চিংড়ির উৎপাদনও কমে গেছে। এ কারণে চাষাবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন কৃষক।


একসময়ের সবুজ-শস্য-শ্যামলা মংলা বর্তমানে শস্যহীন বিপন্ন জনপদ। বেকার হয়ে পড়েছেন উপজে=লার ২০ হাজারের বেশি কৃষক। কাজের সন্ধানে তাঁরা ছুটছেন খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে। মংলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।-=
মংলা উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আশির দশকের শুরু থেকে ধান চাষের পাশাপাশি উপজেলায় বাগদা চিংড়ির চাষ শুরু হয়। কিন্তু সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে লবণাক্ত পানি সারা বছর জমিতে আটকে রেখে চিংড়ি চাষ করায় এবং জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কারণে গত পাঁচ বছরে ধানের ফলন কমতে কমতে এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। উপজেলায় ১০ বছর আগে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হতো। কিন্তু বর্তমানে মাত্র এক হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়। ধানের উৎপাদনও কমেছে মারাত্মক। ১০ বছর আগে এক বিঘা (৫২ শতাংশ) জমিতে রোপা আমন হতো প্রায় ২৫ মণ। এখন তা কমে আট থেকে ১০ মণে নেমে এসেছে।
উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও চিংড়িঘের ব্যবসায়ী মাহামুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন যুগের বেশি সময় ধরে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের ফলে লবণাক্ততা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে বর্তমানে চিংড়ি চাষও হচ্ছে না। আর ধান তো একেবারেই হচ্ছে না। তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানির। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য।’ দ্রুত এই অবস্থার পরিবর্তন করা না গেলে মংলা জনমানবশূন্য হয়ে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এমনই বিরূপ পরিবেশের শিকার মিঠাখালী গ্রামের কৃষক মান্নান শেখ। তিনি বলেন, ‘১০ বছর আগে নিজের তিন বিঘা জমিতে ধান ও চিংড়ি চাষ করে খুব ভালোভাবে সংসার চালাতে পারতাম। কিন্তু জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ এত বেড়েছে যে ধানও পাচ্ছি না, চিংড়িও মারা যাচ্ছে। কোনোভাবেই সংসার চালাতে পারছি না। বাধ্য হয়ে তাই কাজের খোঁজে ঢাকায় যাচ্ছি।’
একই রকম বক্তব্য দেন উপজেলার সাহেবের মেঠ গ্রামের কৃষক আলমগীর শেখ। তিনি বলেন, ‘একসময় ধান কাটার জন্য সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের ফকিরহাট ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের এলাকায় দিনমজুর আসত। এখন আমরাই দিনমজুর হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটতে যাচ্ছি।’
উপকূলবর্তী হওয়ায় মংলা এমনিতেই লবণাক্ত অঞ্চল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আইলার অতিরিক্ত লবণাক্ততা অসহনীয় হয়ে উঠেছে বলে জানালেন চাঁদপাই ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সত্তার ইজারদার। তিনি বলেন, ‘লবণাক্ততার ফলে বসতবাড়ির নারকেল, সুপারি, পেঁপে, আ=ম ও জামগাছ মারা যাচ্ছে। পশুখাদ্যের অভাবে লোকজন গরু, ছাগল ও মহিষ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।’=
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমিতে বছরের পর বছর লবণাক্ত পানি আটকে থাকায় মংলার সব জমির মাটির আঠালো ভাব নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে মাটির স্বাভাবিক গঠন। তাই ফসল উৎপাদন হচ্ছে না বললেই চলে। শুধু ফসল না, লবণে=য় হলো, জমিতে যাতে কোনোভাবেই লবণাক্ত পানি প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে জমির মালিক ও প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া।’-=

No comments

Powered by Blogger.