নদীতে ফাঁদ পেতে পোনা নিধন by আলতাফ হোসেন

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ঘৃণই নদীতে বাঁশের খুঁটি ও জাল দিয়ে পৃথক তিনটি ফাঁদ পেতে মাছ ধরা হচ্ছে। বিশেষ এই ফাঁদে ডিমওয়ালা ও দেশীয় পোনা মাছ ধরা পড়ছে। এতে মাছের বংশ বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।


উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের শিমুলঝুড়ি, সাজানো গ্রাম ও খাগড়াবন্দ কিসমত—এই তিন স্থানে নদীতে আড়াআড়িভাবে ফাঁদ পাতা হয়েছে। এলাকার জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক রুহুল আমীন, আওয়ামী লীগের সমর্থক হোসেন আলী ও মোকারম হোসেন ফাঁদগুলো পেতেছেন বলে জানা গেছে। ২৭ আগস্ট দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ফাঁদগুলো নদীর তিন কিলোমিটারের মধ্যে পাতা হয়েছে। ফাঁদের জাল এতই সূক্ষ্ম যে পোনা মাছও বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাতাসন গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেড় মাস ধরে নদীতে বিশেষ ফাঁদ পেতে ডিমওয়ালা ও দেশীয় পোনা মাছ অবাধে নিধন করা হচ্ছে। এ ফাঁদে বোয়াল মাছের পোনা ব্যাপক হারে ধরা পড়ছে। দেশীয় ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়ায় মাছের বংশ বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এলাকার জামায়াত ও আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা নদীতে ওই ফাঁদ পেতে মাছ ধরছেন।’ জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন নদনদীতে আগের মতো এখন আর বোয়াল বা দেশীয় প্রজাতির মাছ দেখা যায় না। কারেন্ট জাল ও নদীতে ফাঁদ পেতে মাছ নিধন করায় ক্রমান্বয়ে তা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বাইম, কালিবাউস, পাবদা, গছি, নাড়িয়া, চেলা, আইড়, গুনি, ফলি, আছিম, ভাগনা, বাইগর, চিতল, উড়ুয়াসহ অনেক মাছ এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। মৎস্যজীবী আবদুল কুদ্দুস আক্ষেপ করে বলেন, উপজেলার ঘৃণইসহ বিভিন্ন নদনদীতে বাঁশের খুঁটি, বানা ও জাল দিয়ে বিশেষ ধরনের ফাঁদ পেতে মাছ নিধন করা হচ্ছে। এতে মাছের বংশ বৃদ্ধি ঘটছে না। এ কারণে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। মৎস্যজীবীরাও বেকার হয়ে পড়ছেন। নদীতে ফাঁদ পাতা সম্পর্কে রুহুল আমীন বলেন, ‘নদীতে মাছ ধরা তো দোষের কিছু না। সবাই ধরে, আমিও ধরছি।’ তিনি নিজেকে স্থানীয় জামায়াতের সমর্থক বলে দাবি করেন। হোসেন আলী বলেন, ‘আমি একা নই। আরও কয়েকজন মিলে নদীতে বাঁশের খুঁটি ও জাল পেতে মাছ ধরছি। আমরা আইনের পরিপন্থী কাজ করছি না।’ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত কি না জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করার সঙ্গে এটার কী সম্পর্ক?’ মোকারম হোসেনও নদীতে আড়াআড়িভাবে ফাঁদ পাতার কথা অকপটে শিকার করেছেন। তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘কোনো মাছের পোনাও এই ফাঁদ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে না। তবে ফাঁদে এবার বোয়াল মাছের পোনা বেশি ধরা পড়ছে।’ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘৃণই নদীতে ফাঁদ পেতে মাছ ধরার খবর পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার ইসতিয়াক আহমেঞ্চদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদী থেকে ওই ফাঁদ তুলে নেওয়ার জন্য তহশিলদারের মাধ্যমে গত রোববার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর পরও তুলে না নিলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
নদ-নদী, খাল-বিলে মাছ চলাচলের পথে আড়াআড়ি বাঁধ বা স্থায়ীভাবে বেড়া দেওয়া মৎস্য আইনে দণ্ডনীয়। এ ছাড়া প্রতিবছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় ইঞ্চির ছোট নলা মাছ (রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউস ও ঘনিয়া) এবং ৩০ সেন্টিমিটারের ছোট বোয়াল ও আইড় মাছ ধরা বা বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। মৎস্য সংরক্ষণ আইনে এ বিধি লঙ্ঘন করলে এক থেকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.