কুষ্টিয়ায় তিন খুন-ইউপি চেয়ারম্যানের মাথা কেটে নিলো সন্ত্রাসীরা

কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর দুই সঙ্গীকে হত্যার পর নারকীয় উল্লাস করেছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকার ওপর গুলি ও জবাই করে হত্যার পর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের ছিন্ন মস্তক নিয়ে গেছে হত্যাকারীরা। এর আগে তারা কাটা দেহ ছুড়ে ফেলে দেয় নদীতে।


গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ খেয়াঘাটের পদ্মা নদীতে শতাধিক মানুষের সামনে এ বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, খোকসা উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম (৪৭) পাবনা আদালতে একটি অস্ত্র মামলায় হাজিরা দিয়ে সঙ্গীসহ শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর ঘাট দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় খুনের শিকার হন। তাঁর সঙ্গে নিহতরা হচ্ছেন আনসার আলী (৪০) ও মনিরুল ইসলাম ভুট্টো (৩৭)।
ট্রলারের মাঝি আবু হানিফ জানান, গতকাল দুপুর ২টার দিকে তিনি পাবনার চরসাধিপুর খেয়াঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে শিলাইদহ খেয়াঘাটের দিকে রওনা হন। মাঝনদীতে আসার পর হঠাৎ ছোট ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা তাঁর নৌকাটি থামানোর সংকেত দেয়। এরপর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাঁর নৌকায় ঝাঁপ দিয়ে উঠে পড়ে। সন্ত্রাসীরা প্রথমে চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর তাঁর মাথা কেটে লাথি মেরে দেহ নদীতে ফেলে দেয়। এরপর চেয়ারম্যানের সঙ্গী কুমারখালী উপজেলার দমদমা গ্রামের ভুট্টো ও পশ্চিম আমবাড়িয়ার আনসার আলীকে গুলি করে হত্যা করে। আনসার আলীর লাশও তারা নদীতে ফেলে দেয়।
ঘটনার সময় ট্রলারে থাকা মাছ ব্যবসায়ী আজমত আলী গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সাদেক শেখ জানান, ট্রলারটি মাঝনদীর কাশবনের কাছে পৌঁছালে সেখানে একটি নৌকায় ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা মাঝিকে ট্রলার থামাতে নির্দেশ দেয়। পরে তারা অস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখায়। যাত্রীদের সামনেই তিনজনকে হত্যা করে। এরপর চেয়ারম্যানের মাথা নিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে নৌকায় করে চলে যায়।
খবর পেয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক, পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, কুমারখালী থানার ওসি আবদুর রাজ্জাকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পূর্বশত্রুতার জের ধরে কোনো চরমপন্থী গ্রুপ এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
নিহত ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম একসময় জাসদ গণবাহিনী সমর্থিত চরমপন্থী দলের নেতা ছিলেন। গোপন রাজনীতিতে তাঁর দাপট ছিল যথেষ্ট। দেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে পালিয়ে দেশের বাইরে চলে যান। পরে এলাকায় ফিরে এসে নিজ নামে 'ইসলাম বাহিনী' গঠন করেন। যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। ইউপি নির্বাচনের আগে একে-৪৭ রাইফেলসহ পাবনা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। জামিনে ছাড়া পেয়ে নির্বাচন করেন তিনি। ওই অস্ত্র মামলায় হাজিরা দিয়ে গতকাল বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.