পবিত্র কোরআনের আলো-মুনাফিকদের বিভ্রান্তি ও পরিণতি

১২. আলা ইন্নাহুম হুমুল মুফসিদুনা ওলা কিল্লা ইয়াশউরুনা। ১৩. ওয়া ইজা কি্বলা লাহুম আমিনু কামা আমান্নাসু ক্বালু আনু'মিনু কামা আমানাস সুফাহাউ, আলা ইন্নাহুম হুমুস সুফাহাউ ওয়ালাকিল লা-ইয়া'লামুনা। ১৪. ওয়া ইজা লাক্বুল্লাজিনা আমানু ক্বালু আমান্না, ওয়া ইজা খালাও ইলা শাইয়াতি্বনিহিম ক্বালু ইন্না মা'আকুম ইন্নামা নাহনু মুস্তাহ্জিউনা।
১৫. আল্লাহু ইস্তাহ্জিউ বিহিম ওয়া ইয়ামুদ্দুহুম ফি তুগ্ইয়ানিহিম ইয়া'মাহুন।
১৬. উলায়িকাল লাজিনাশ্তারাউদ্ব দ্বালালাতা বিল হুদা ফামা রাবিহাত তিজারাহুতুম ওয়ামা কানু মুহতাদিনা।

অনুবাদ
১২. সাবধান! এরাই হচ্ছে পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টিকারী, যদিও তারা এ ব্যাপারে চৈতন্য রাখে না।
১৩. এবং যখন তাদের বলা হয়, তোমরাও ইমান গ্রহণ করো, যেমন অন্য লোকেরা ইমান গ্রহণ করেছে। তখন তারা বলে, আমরা কি ইমান আনব সুফাহাদের (নির্বোধ) মতো? জেনে রাখো, এরাই নির্বোধ। কিন্তু এরা নিজেরা তা জানে না।
১৪. তারা যখন ইমানদার লোকদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ইমান এনেছি। আবার যখন একাকী তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি। আমরা ইমানদারদের সঙ্গে উপহাস করছিলাম মাত্র।
১৫. বরং আল্লাহ তায়ালাই তাদের সঙ্গে উপহাস করেন। আর তাদের তিনি দীর্ঘমেয়াদে ছেড়ে দিয়েছেন, যেন তারা নিজেদের মিথ্যা আত্মশ্লাঘায় হয়রান ও পেরেশান থাকে।
১৬. এরা হিদায়াতের বিনিময়ে গোমরাহি কিনে নিয়েছে। তাদের এই ব্যবসাটা মোটেও লাভজনক হয়নি এবং এরা সঠিক পথের অনুসারীও নয়।

ব্যাখ্যা
১২ নম্বর আয়াতে উপরোল্লিখিত (গত সংখ্যায়) মুনাফিকদের সম্পর্কে সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে। এখানে মুনাফিকদের ফাসাদ সৃষ্টিকারী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, মুনাফিক এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীরা সাধারণত অভিন্নই হয়ে থাকে। ফাসাদ হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে ঘৃণিত ও বিপজ্জনক অপরাধ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ফাসাদ হত্যার চেয়েও মারাত্মক।
পরবর্তী আয়াতগুলোতে মুনাফিকদের মুনাফিকির আলামত, তাদের চরম বিভ্রান্তি এবং পরিণতির বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। ১৩ নম্বর আয়াতে 'সুফাহা' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। 'সুফাহা' অর্থ- নির্বোধ, নিঃস্ব বা নিম্নবর্ণের মানুষ। ইসলামের আবির্ভাবের প্রাথমিক যুগে মক্কায় যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের একটি বড় অংশই ছিল তৎকালীন আরবে নিম্নবর্ণ হিসেবে চিহ্নিত মানুষ। তাঁরা ছিলেন হাবশি ক্রীতদাস। মুনাফিকরা তাঁদের প্রতি ইঙ্গিত করেই নিজেদের অহমিকা প্রকাশ করত। মুনাফিকদের উদ্দেশে আল্লাহ বলেন, এরাই বরং নির্বোধ বা নিম্নবর্ণের মানুষ, কিন্তু তারা নিজেরা তা জানে না।
আল্লাহর রাসুল এবং ইমানদারদের সঙ্গে মুনাফিকদের উপহাস প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, বরং আল্লাহই তাদের সঙ্গে উপহাস করছেন। আল্লাহ তায়ালা কারো সঙ্গে উপহাস করেন না, তিনি মুনাফিকদের উপহাসের জবাব দিচ্ছেন মাত্র। এটা সত্যের প্রতি উপহাসের প্রাপ্য ফল। ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারীদের আল্লাহ সাময়িকভাবে সুযোগ দেন ধৃষ্টতা প্রদর্শন করার। তবে এর পরিণতি তারা অবশ্যই ভোগ করবে। আর এই পরিণতি ভয়াবহ।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.