কাগজপত্র নকল তবে লাইসেন্স আসল by এস এম রানা

মোটরযান চালক হিসেবে লাইসেন্স পেতে নানা কাগজপত্র দরকার হয়। পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন এসব কাগজপত্রের বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে বিআরটিএর কাছে প্রতিবেদন দেয়। পরে বিআরটিএ আবেদনকারীর পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স দেয়। এটা হলো নিয়মের কথা। এর বাইরে কাগজপত্র ছাড়াও লাইসেন্স মেলে।


তেমনই এক 'করিৎকর্মা'কে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশ। ওই ব্যক্তির মাধ্যমে লাইসেন্স পেতে কোনো কাগজপত্রের দরকার হয় না। তবে তার সরবরাহ করা লাইসেন্সটি পুরোপুরিই 'আসল'। এ কারণে তাকে 'ওয়ান স্টপ সার্ভিস' নামে আখ্যায়িত করেছেন খোদ সিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম।
শফিকুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেপ্তার করা জসিম উদ্দীনকে (৪৫) 'ওয়ান স্টপ সার্ভিস' নামে অভিহিত করেন। জসিমের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। সে দীর্ঘদিন ধরে বিআরটিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে লাইসেন্স দিচ্ছে। তার কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করেছে বিআরটিএর আসল ফরম। উদ্ধার করা সব কাগজই জসিমকে সরবরাহ করেছেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। আর জসিম কর্মকর্তাদের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ফরম পূরণ করে লাইসেন্স সরবরাহ করছে। এমনকি তা ছাপাও হচ্ছে বিআরটিএর লাইসেন্স প্রিন্ট কারখানায়!
সিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, 'জসিমের কাছ থেকে উদ্ধার করা সব কাগজপত্রই আসল। এসব কাগজ বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তারা জসিমকে দিয়েছেন। জসিম বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা পুলিশের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে এসব ফরম পূরণ করে। পরে আবেদন করা ব্যক্তির মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স দেওয়া হয়।'
লাইসেন্সটি আসল দাবি করে গ্রেপ্তারকৃত জসিম কালের কণ্ঠকে বলে, 'আমি কাগজপত্র পূরণ করে দিই। আর বিআরটিএর কর্মকর্তার মাধ্যমে লাইসেন্স পেয়ে থাকি। পরে এসব লাইসেন্স আবেদনকারী ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর জন্য ক্ষেত্রভেদে চার-পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়।'
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুজ্জামান বলেন, 'জব্দ করা সব কাগজপত্রই বিআরটিএ থেকে সরবরাহ করা হয়েছে এবং লাইসেন্সও বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রিন্ট হচ্ছে। তাই আসল ও নকল লাইসেন্সের পার্থক্য ধরা মুশকিল।' সিএমপির উপকমিশনার (সদর) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, 'আবেদন করা ব্যক্তির পক্ষে সব কিছু নকল করে জমা দেয় জসিম। আর বিআরটিএর একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রকৃত লাইসেন্স প্রিন্ট করে দেওয়া হয়। তবে লাইসেন্সের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে এটি করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বিআরটিএর কর্মকর্তারা ভুয়া মেমোর মাধ্যমে এসব লাইসেন্সের কাপজপত্র তাঁদের প্রিন্ট শাখায় পাঠাতে পারেন। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।'
নগর গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার তারেক আহম্মেদ বলেন, 'সোমবার রাতে নগরীর বায়েজিদ থানার বালুচরায় করিম কলোনিতে অভিযান চালিয়ে জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে বিআরটিএ বিভাগের বিপুল সরকারি দলিলপত্র, জাল স্ট্যাম্প ও সিল উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জসিম জানিয়েছে, তাদের একটি দল দীর্ঘদিন ধরে বিআরটিএর এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে আসছে।'

No comments

Powered by Blogger.