মাইলামের বক্তব্য ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের অংশ- যুক্তরাষ্ট্রে শোক দিবসের আলোচনায় নেতারা

বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশকে কোন ধরনের সহায়তা না দেয়ার জন্যÑএ মন্তব্য করা হয় ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল) নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও মূলত: তা
পরিণত হয় ‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার প্রতিহত করার সংকল্প গ্রহণের সমাবেশে।’ এতে সভাপতিত্ব করেন এ সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আকতার হোসেন এবং পরিচালনা করেন সেক্রেটারি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শুরু এ সমাবেশে মোট ২৮ জন বক্তব্য রাখেন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী। তিনি এ সমাবেশ থেকে আরও উল্লেখ করেন, ষড়যন্ত্রকারীরা ইতোমধ্যেই একটি ক্যু-র (সামরিক অভ্যুত্থান) চক্রান্ত করেছিল বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার জন্য। কিন্তু আমাদের বিচক্ষণ গোয়েন্দা বিভাগ তা নস্যাত করে দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের নাম-নিশানা মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রয়েছে বলেও দাবি করেন নিজাম চৌধুরী। ১৪ আগস্ট ওয়াল স্ট্রীট জার্নালে এক সময় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী উইলিয়াম বি মাইলামের লেখা একটি মন্তব্য প্রতিবেদনের বক্তব্যের কঠোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নিজাম চৌধুরী বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে লুট করা সম্পদের বিরাট একটি অংশে আন্তর্জাতিক লবিস্ট ফার্ম ভাড়া করেছে একাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসররা। উইলিয়াম বি মাইলাম সে প্রক্রিয়ারই একটি অংশ এবং এজন্যই তিনি নগ্ন ভাষায় বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশকে সহায়তা না করার জন্য। নিজাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন আর বোকা নেই। তাঁরা সবকিছু বুঝতে শিখেছেন এবং তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাচ্ছেন। একাত্তরেও এমন অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালী ঐক্যবদ্ধ ছিল বলে স্বাধীনতা যুদ্ধকে নস্যাত করা সম্ভব হয়নি। নিজাম চৌধুরী বলেন, এবারও সম্ভব হবে না, কারণ গোটা জাতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। অবিলম্বে এহেন ষড়যন্ত্র থেকে বিরত হওয়ার আহ্বানও জানানো হয় মাইলামসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি। উল্লেখ্য যে, ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক প্রখ্যাত থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার’-এর সিনিয়র স্কলার হচ্ছেন উইলিয়াম বি মাইলাম। এই থিঙ্কট্যাঙ্ক থেকেই বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। সাবেক কূটনীতিক, গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং আমলারা এ থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে জড়িত।
এ সমাবেশ থেকে আরও ঘোষণা করা হয়, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্য শেখ হাসিনা যখন নিউইয়র্কে আসবেন তখন তাঁকে স্মরণকালের বৃহত্তম সংবর্ধনা প্রদান ছাড়াও জাতিসংঘের সামনে ও জেএফকে এয়ারপোর্টে বিরাট শান্তি সমাবেশ করা হবে। উল্লেখ্য যে, জেএফকে এয়ারপোর্ট, জাতিসংঘের বাইরে এবং শেখ হাসিনার হোটেলের সামনে কালো পতাকা প্রদর্শন ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের যে কর্মসূচী বিএনপি ঘোষণা করেছে তাকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিহত করার জন্যই আওয়ামী লীগ এ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন নিজাম চৌধুরী।
অপর বক্তারা উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মাধ্যমেই তার প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা সম্ভব হবে। আলোচনায় অংশ নেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. মনসুর খান, যুক্তরাষ্ট্র আ’লীগের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান, সৈয়দ বসারত আলী, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, শামসুদ্দিন আজাদ ও নজমুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ এবং আইরিন পারভিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, যুক্তরাষ্ট্র জাসদের সভাপতি আব্দুল মোসাব্বির, নিউইয়র্ক স্টেট আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, নিউইয়র্ক মহানগর আ’লীগের সিনিয়র সহসভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী এবং সেক্রেটারি ইমদাদুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ ল সোসাইটির সেক্রেটারি মুর্শেদা জামান, বঙ্গমাতা পরিষদের সভাপতি আশরাফুজ্জামান, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি শামসুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারি নুরুজ্জামান সর্দার, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সেক্রেটারী জাহাঙ্গীর হোসেন, আ’লীগের নির্বাহী সদস্য জসীমউদ্দিন খান মিঠু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের বাইরের অঞ্চলের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।

No comments

Powered by Blogger.