কুষ্টিয়ায় দিনদুপুরে আ’লীগ নেতাসহ তিনজনকে গুলি ও জবাই- চরমপন্থীরা কমান্ডো স্টাইলে হামলা করে লাশ ভাসিয়ে দেয় নদীতে

কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে খেয়াঘাটে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দিন-দুপুরে প্রতিপক্ষের চরমপন্থীরা কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা এক ইউপি চেয়াম্যানসহ তিনজনকে নৃশংসভাবে গুলি ও জবাই করে লাশ ভাসিয়ে দেয় নদীতে। নিহতরা হচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম (৪৭), তাঁর সঙ্গী আফজাল (৪৫) ও ভুট্টো (৪৫)।


ঘটনার পর একজনের লাশ উদ্ধার হলেও ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুইজনের লাশ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামকে গুলি ও জবাই করার পর তাঁর মস্তক বিচ্ছিন্ন করে দেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয় এবং মস্তকটি নিয়ে পালিয়ে যায়। লোমহর্ষক এ ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুরে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে। এদিকে বর্বরোচিত এ হত্যাকা-ের ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক ও পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম পাবনা জেলা জজ আদালতে অস্ত্র মামলার আসামি হিসেবে আদালতে হাজিরা দিয়ে নদীপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়ায় ফিরছিলেন। চেয়ারম্যান ও তাঁর সঙ্গীসহ দুপুর দেড়টার দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি পদ্মা পাড়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ঘাট এলাকায় পৌঁছানোর পূর্বেই ৬-৭ জনের সশস্ত্র চরমপন্থী সন্ত্রাসী ট্রালারযোগে ছুটে এসে চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও তাঁর সঙ্গীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও তাঁর সঙ্গী আফজাল ও ভুট্টোকে এলোপাতাড়ি গুলি ও জবাই করার পর লাশ পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়। তারা চেয়ারম্যানকে হত্যার পর তাঁর মস্তক ছিন্ন করে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়। ঘটনার পর ভুট্টোর লাশ পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও আফজালের লাশ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় শিলাইদহের কুমারকান্দি গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আজমত (৫৫) ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শী কুমারখালী থানা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি উজির হোসেন জানান, সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে ট্রলারযোগে নদীপথে পালিয়ে যায়। হত্যাকা-ের সঠিক কারণ পুলিশ জানাতে পারেনি। তবে পূর্ব শত্রুতাবশত চরমপন্থীরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের নামে পাবনা থানায় চারটি অস্ত্র মামলা রুজু হয়। পাবনার আদালতে বিচারাধীন ওই মামলায় মঙ্গলবার ইউপি চেয়ারম্যান আদালতে হাজিরা শেষে নদীপথে বাড়ি ফেরার সময় প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীদের হাতে তিনি নির্মমভাবে খুন হন। আদালতে অস্ত্র মামলা ছাড়াও ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগসাজশ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের নানা অভিযোগ ছিল বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের উর্ধতন এক কর্মকর্তা জানান। নুরুল ইসলাম ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ছিলেন। পৈশাচিক এই হত্যাকা-ের ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে চরম ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরবর্তী সহিংস ঘটনা এড়াতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।
২ বোমাসহ চরমপন্থী
গ্রেফতার
নিজস্ব সংবাদদাতা, মেহেরপুর থেকে জানান, জেলার গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রাম থেকে ২টি বোমাসহ নাছির উদ্দীন (৪০) নামের এক চরমপন্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোরে হাড়াভাঙ্গা গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, ভোরে তাঁরা হাড়াভাঙ্গা গ্রামে টহল দিচ্ছিলেন। গ্রামের প্রথম পাড়ায় পৌঁছালে ৩-৪ জন লোক দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা ১টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ তাড়া করে নাছির উদ্দীনকে ১টি বোমাসহ গ্রেফতার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক সকাল এগারোটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে আরও ১টি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। নাছির উদ্দীন গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের মৃত আবু বক্করের ছেলে। তার নামে গাংনী থানায় সন্ত্রাসী কর্মকা-ের একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গাংনী থানার ওসি বিমল কৃষ্ণ মল্লিক।

No comments

Powered by Blogger.