আমাদের পথ হচ্ছে সোজা গণতন্ত্রের, এটা মনে রাখতে হবে- বঙ্গবন্ধু স্মরণসভায় ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বহু সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ রয়েছে কিন্তু জনগণের সামনে দাঁড়ানোর সাহস নেই তাদের জন্য ক্ষমতায় যেতে বাঁকা পথই সহজ।
তবে আমাদের কাছে কোন বাঁকা পথ নেই, আমাদের পথ সহজ। তা হচ্ছে গণতন্ত্রের পথ। জনগণ চাইলে আছি, নইলে নয়। কিন্তু দেশের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংগঠনটির ঐতিহ্যবাহী অতীত ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনের পেছনে ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। সবাইকে মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ কোন সামরিক স্বৈরশাসকের পকেট থেকে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দল নয়। এ দেশের মাটি ও মানুষের মধ্যে থেকে তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়েই এ দলটির জন্ম। তাই প্রতিটি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে ভালভাবে পড়াশোনা করে নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলে সেই ঐতিহ্য ও গৌরব ধরে রাখতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সংগঠনের জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন সংগঠন শক্তিশালী এবং সেই সংগঠনের ওপর জনগণের আস্থা-বিশ্বাস না আসলে- সেই সংগঠন দিয়ে ভাল কিছু অর্জন করা যায় না।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের পরিচালনায় আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল হক, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফায়েকুজ্জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে ছাত্রলীগের শোক দিবস উপলক্ষে বের করা প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্বাচনেও কোন অনিয়ম বা গ-গোল হয়নি। দেশের জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে যা চেয়েছে তাই হয়েছে। অতীতে তা কখনই হয়নি। কারণ আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করেছি। কষ্টার্জিত গণতন্ত্রকে বার বার ধ্বংস করতে অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হয়েছে, এখনও চলছে। আর এ অর্জনের পেছনে বহু মানুষের মহান আত্মত্যাগ রয়েছে। তাই যে কোন মূল্যে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।
জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী এক সামরিক ডিক্টেটর একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে পরাজিত শক্তির পদলেহনকারীর দেশে পরিণত করতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে নীতি ও আদর্শ নিয়ে আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলাম, সেই আদর্শকে ধ্বংস করতে চেয়েছে ’৭৫-এর খুনী ও তাদের দোসররা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাতের পাশাপাশি স্বাধীনতার ঘোষণা ও ইতিহাসকেও বিকৃতি করা হয়। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। স্বাধীনচেতা মনোভাব অনেকেরই পছন্দ নয়। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ন্যায় ও সত্য নিয়ে এগিয়ে গেলে সত্যের জয় হবেই। আমরা সেই নীতি ও আদর্শ নিয়েই দেশের মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের এমন উৎসবমুখর ঈদ কখনও হয়নি। পবিত্র রমজান মাসে একটি জিনিসের দাম বাড়েনি, বিদ্যুত-গ্যাসের সঙ্কট ছিল না। এবারের ঈদে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ঈদের সময় প্রায় এক কোটি মানুষকে আমরা বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দিয়েছি। নিম্ন আয়ের প্রায় ৫ কোটি মানুষ এখন মধ্যম আয়ের কাতারে উঠে এসেছে। নীতি ও আদর্শ নিয়ে আমরা দেশ পরিচালনা করছি বলেই এসব সম্ভব হয়েছে।
‘জীবনের পথ চলায় সবসময় নিচের দিকে তাকাবে’Ñ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর এই মহান উদ্ধৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন সব সময় নিচের দিকে অর্থাৎ সমসময় গরিব মানুষের দিকে তাকিয়ে পথ চলতে হবে। মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর চিন্তা। তাঁর নীতি ছিল গণমুখী। অর্থ, বিত্ত, সম্পদ করতে হবে এটা চিন্তা তিনি কখনই করেননি। সন্তানদেরও তিনি এসব শিখিয়ে গেছেন। দেশের গরিব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং তাদের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি। নিজে কী পেলাম সেটি বড় কথা নয়, জনগণকে কী দিতে পারলাম সেটিই বড় কথা। বঙ্গবন্ধুর এই নীতি ও আদর্শ নিয়েই সবাইকে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যেতে হবে। গরিব-দুখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের লক্ষ্যে।
বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাঁর মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পর্দার অন্তরালে থেকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে জীবনের অধিকাংশ সময়ই জেলে কাটাতে হয়েছে। কিন্তু শত কষ্টের মধ্যেও মাকে (ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) কখনও ভেঙ্গে পড়তে বা দিশেহারা হতে দেখিনি। পর্দার আড়ালে থেকে দেশের প্রতিটি অর্জন ও সংগ্রামে বঙ্গমাতা নিবিড়ভাবে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর আমৃত্যু পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর পাশে এমন উপযুক্ত সহধর্মিণী না থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কিনা জানি না।
প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের পাশে থেকে তাদের উন্নয়নে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা দেশকে আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তুলতে চাই। যতই বাধা বা ষড়যন্ত্র হোক, আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবই।

No comments

Powered by Blogger.