যে কোন সময় মসিউরের পদত্যাগ- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক by হামিদ-উজ-জামান মামুন

অবশেষে বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে যে কোন মুহূর্তে পদত্যাগ করতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দাতাদের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে এর কোন বিকল্প নেই সরকারের হাতে। মঙ্গলবার এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে বলে জানা গেছে।


রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সংক্ষিপ্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদের সঙ্গেও পৃথকভাবে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে গত কয়েক দিন ধরে চলতে থাকা অর্থ উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন বাস্তবে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক মহাপরিচালক জুয়ান মিরেনদা দু’দিনের এক সফরে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। আজ বুধবার সংস্থাটির বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ক এক বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। এ সময় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। পদ্মা সেতুতে ঋণ কার্যকারিতার বর্ধিত মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বাংলাদেশে নিযুক্ত আবাসিক প্রতিনিধি তেরেসা খো মঙ্গলবার বিকেলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে তাঁর অফিসে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। বেরিয়ে যাওয়ার সময় কী নিয়ে কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পদ্মা সেতুর বিষয়ে কোন কথা হয়নি। আগামীকাল (আজ) অনুষ্ঠেয় পোর্টফলিও মিটিং নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক এবং এডিবির আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার বিষয়ে এখনও হাল ছাড়তে নারাজ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংস্থাটির ফেরার আশা এখনও করছেন তিনি। মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার হাতে এখনও ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় রয়েছে। হতাশ হওয়ার মতো কিছু এখনও ঘটেনি।
এদিকে আজ বুধবার পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়ার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। তাঁর বিবৃৃতির আগেই প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদত্যাগ হতে পারে বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে পদ্মা সেতু নিয়ে বিবৃতিটি প্রস্তুত করার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি কিছু দিকনির্দেশনা দেবেন। ওই আলোকে বিবৃতি দেয়া হবে।
এর আগে গত সোমবার ড. মসিউর রহমান পদত্যাগ করতে পারেন এ রকম একটি জোর গুঞ্জন উঠেছিল। ড. মসিউর রহমান সচিবালয়ে নির্ধারিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে ড. মসিউর রহমান ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন।
আবার গতকাল মঙ্গলবারও তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি সর্বত্রই আলোচিত ছিল। কিন্তু তিনি একনেক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। ওই বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগেই বেরিয়ে গেলেও ড. মসিউর রহমান থেকে যান ভেতরেই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। পরিবেশ পর্যালোচনা করে ওই স্থানে উপস্থিত একাধিক সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, অর্থ উপদেষ্টার পদত্যাগ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রধানমন্ত্রী হয়ত সে নির্দেশনাই দিয়েছেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ পত্র পাঠানোর বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দেখভাল করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে কিছুই জানানো হয়নি।
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত জুন মাসে বিশ্বব্যাংক দেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল করে। এর পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেও অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
২৯০ কোটি ডলারে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। বাকি অর্থের বেশিরভাগ দেয়ার কথা এডিবি, আইডিবি ও জাইকার।
বিশ্বব্যাংককে ফেরানোর চেষ্টার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কয়েকদিন আগেও বলেছিলেন, তারা অর্থায়ন করলে এ নিয়ে আমাদের যে ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার হবে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংককে ফেরানোর জন্য একটি চিঠি তিনি তৈরি রেখেছেন। আলোচনায় ইতিবাচক সাড়া মিললেই ওই চিঠি পাঠানো হবে।
গত বছরের সেপ্টেম্ব^রে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর চারটি শর্ত সরকারকে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তা পালন হয়নি বলে অভিযোগ জানিয়ে গত ২৯ জুন অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায় তারা।

No comments

Powered by Blogger.