পথশিশু-পথ খুঁজে দেওয়ার দায় আমাদেরই

পথশিশু থেকে নায়ক বনে যাওয়ার রঙিন কাহিনী আমরা চলচ্চিত্রে মাঝে মধ্যে দেখি বটে; বাস্তবে তাদের জীবন কতটা ধূসর 'পথশিশুর দুঃসহ জীবন' নিয়ে মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তার খণ্ডচিত্র। রেলস্টেশনে, ফুটপাতে, পার্কে রাত কাটাতে দেখে তাদের মাথার ওপর ছাদের অভাবই প্রথম চোখে পড়ে; তাদের খাওয়া ও পরা নিয়ে শতব্যস্ত নাগরিক কখনও কখনও দুর্ভাবনায়ও ভোগেন বৈকি।


কিন্তু তাদের জীবনের অন্ধকার কতটা গাঢ়, প্রতিবেদনে উদ্ধৃত পরিসংখ্যান তার প্রমাণ। আমরা যখন শ্রেণীকক্ষে শিশুর মানসিক নির্যাতন নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন দেখা যাচ্ছে পথশিশুদের ৭২ শতাংশই শারীরিক নির্যাতনের শিকার। সমাজের পঙ্কিলতায় ভেসে বেড়ানো আরও নানা নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা এসব শিশু যখন অন্ধকার জগতে পা বাড়ায়, তখন তাদের দায়ী করার অবকাশ সামান্যই। বস্তুত তাদের অস্বাভাবিক জীবনের দায় আমাদেরই। যে প্রক্রিয়ায় তারা জন্ম নেয় এবং বেড়ে ওঠে, তা আমাদেরই সামষ্টিক ব্যর্থতার ফসল। উপযুক্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে তাদের জীবন আর দশটা শিশুর মতো হতে পারত সন্দেহ নেই। চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে তারা যে বৈষম্যের শিকার হয়, কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে তা দূর করা কঠিন নয়। সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মানসিকতার বদলও জরুরি। বিশেষ করে পুলিশের মানবিক আচরণ এদের জীবনে বড় আশীর্বাদ হয়ে আসতে পারে। এটা ঠিক, পথশিশুদের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র থাকলে এভাবে খোলা আকাশের নিচে তাদের রাত কাটাতে হতো না। তাতে করে অনেক ধরনের নির্যাতন থেকে রেহাই পেত তারা। কমত মাদকাসক্তি ও পাচারের ঝুঁকিও। তবে প্রয়োজন স্থায়ী প্রতিকার। পথশিশুর জন্য সঠিক পথ খুঁজে দেওয়ার কাজটি বিলম্বে হলেও শুরু হোক। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসতে পারে। যে জীবন হরিণের ফড়িংয়ের দোয়েলের_ সেটা হয়তো আমরা দিতে পারব না। কিন্তু তাদের বোঝার ওপর শাকের আঁটিটি কিন্তু সহজেই নামিয়ে রাখা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.