টম-কেটির ডিভোর্সের পেছনে ‘সুরি’

বাবা বিশ্বখ্যাত অভিনেতা টম ক্রুজ। মা কেটি হোমস্ অভিনেত্রী হলেও বাবার খ্যাতির ছায়ায় অনেকটা ঢাকা পড়ে গেছেন। বাবা-মা দুজনের যৌথ আদর-আহ্লাদ থেকে এখন অনেক দূরে সরে গেল সুরি। বাবার অতিগোঁড়া ধর্মান্ধতা ছোট্ট সুরির বাবা মায়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে।
কোনো কিছুরই বাড়াবাড়ি হয়তো ভালো না। ধর্মানুভূতি মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে কিন্তু ধর্মান্ধতা মানুষের মনুষ্যত্ব ছিনিয়ে নেয়, জীবনকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে রাখে। বাবা টম চেয়েছিলেন সুরিকে সায়েন্টোলজি উপাসনালয়ের শিবিরে পাকাপোক্তভাবে রাখতে। যেখানে শিশুদের ছয় বছর বয়স থেকে আবাসিকভাবে থাকার ব্যবস্থা আছে। উদ্দেশ্য সায়েন্টোলজি ধর্মদীক্ষায় দীক্ষিত করা। সায়েন্স ফিকশন গল্পের লেখক এল.লন হাবার্ড এই ধর্মের আবিষ্কারক। সায়েন্টোলজি শিবিরে একজন দীক্ষাকারীকে ৩০ বছর পর্যন্ত থাকতে হয় এবং তাদেরকে পরিবার পরিজন থেকে যোগাযোগবিহীন অবস্থায় দিন কাটাতে হয়।
কেটি হোমস্ ক্যাথলিক খ্রিস্টান হলেও স্বামী টমের ধর্মচর্চায় এবং ধর্মানুভূতিতে কখনো বাধা দেননি। ঘর সংসার ঠিকঠাক করে আসছিলেন। টমের সঙ্গে নিয়মিত সায়েন্টোলজি উপাসনালয়েও যেতেন। কিন্তু শেষমেষ আর পারলেন না যখন দেখলেন টম তার মেয়েকে সায়েন্টোলজি শিবিরে থাকা এবং দীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। এটা নিয়ে টমের সঙ্গে বিস্তর বাদানুবাদ হয়েছে কেটির।

তদন্তে বেরিয়ে আসছে অদ্ভুত সব ঘটনা। ছয় বছরের ছোট্ট শিশু সুরিকে সায়েন্টোলজি বুট ক্যাম্পের পরিচালনায় বিদ্বেষপূর্ণ এবং শিশুমনের জন্য অশুভকর ৯৯ টি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ৬-১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য নির্ধারণ করা এ প্রশ্নগুলো। সায়েন্টোলজি দীক্ষায় দীক্ষিত বাবা মায়ের সন্তানদের জন্য এই ক্যাম্পে অংশগ্রহণ অবধারিত। সুরির মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এই ভাবনায় এই বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি মা কেটি।

‘সি অর্গানাইজেশন’ এক ধরনের সায়েন্টোলজি দীক্ষা শিবির, সেখানে বিগত অনেক বছর ধরে সায়েন্টোলজি ধর্মাচরণে অভ্যস্ত এবং অভিজ্ঞ মানুষদের দ্বারা মিলিটারি নিয়মকানুনের মাধ্যমে অত্যন্ত কঠোরভাবে শিশুদের ধর্মাচরণে বাধ্য করা হয়। সায়েন্টোলজি অনুসারী বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের সেখানে রাখছেন হরহামেশাই। কিন্তু তাদের মতো হতে পারলেন না কেটি হোমস্। মেয়ে সুরিকে বাঁচাতে উচিত পদক্ষেপটিই তিনি বেছে নিলেন। ডিভোর্স আবেদন করলেন।

মা কেটি জানতেন একসঙ্গে থাকলে তিনি কখনো টমের সিদ্ধান্তে বাঁধ সাধতে পারতেন না। মেয়েকে রক্ষার একটি উপায়ই তার সামনে খোলা ছিল। কেটি এটাও জানতেন একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সুরির কাস্টডি মা হয়ে তিনি নিজেই পাবেন।

সম্প্রতি ডিভোর্স আবেদন করার পর ঘটনার পেছনের বিষয়াদি নিয়ে আস্তে আস্তে মুখ খুলছেন কেটি হোমস্। কেটি নিজে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও বাবার গোঁড়ামি থেকে মেয়েকে রক্ষা করতেই বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন করলেন মেয়ে সুরিকে।

প্রতিটা মায়ের কাছেই তার সন্তানের আনন্দময় ভবিষ্যত কাম্য। শুধু প্রাত্যহিক জীবনেই না সার্বিকভাবে জীবনের প্রতিটা ক্ষণকে শুধু ধর্মচর্চার জন্য শিবিরে থাকার মতো কঠোর ব্যবস্থাকে মেনে নিতে পারেন না যেকোনো প্রগতিশীল মা। আদালতের কাছে বাবা টম প্রথমে যৌথ কাস্টডি চেয়েছিলেন কিন্তু এখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একক কাস্টডি প্রাপ্তির। দেখা যাক সুরির ভাগ্যলিপিতে কি লেখা আছে!

No comments

Powered by Blogger.