কুখ্যাত ডাকাত শহীদ 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত by রেজোয়ান বিশ্বাস

কয়েকবার ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পুরান ঢাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদ এক সহযোগীসহ নিহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে সদরঘাট-সংলগ্ন লক্ষ্মীবাজার এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব। ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে।


র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল কালের কণ্ঠকে জানান, গতকাল রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লক্ষ্মীবাজার এলাকায় সন্ত্রাসীদের অবস্থান জানতে পেরে অভিযান চালায় র‌্যাবের চারটি টিম। এ সময় হঠাৎ সন্ত্রাসীদের মুখোমুখি হয় র‌্যাব। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় ১৫ মিনিট গোলাগুলির পর ঘটনাস্থল থেকে ডাকাত শহীদসহ তার সহযোগীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো জানান, র‌্যাব জানতে পারে- তিন দিন আগে ডাকাত শহীদ তার সহযোগীদের নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। এর পর থেকে র‌্যাবের একাধিক টিম ডাকাত শহীদ ও তার সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছিল।
পুরান ঢাকার বাসিন্দারা জানায়, প্রায় দুই দশক ধরে ডাকাত শহীদ পুরান ঢাকা ও কেরানীগঞ্জসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। তার বাহিনীকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে নিশ্চিত গুলির মুখোমুখি হতে হতো সবাইকে। পেশাদার ডাকাত ও খুনি হিসেবে ডাকাত শহীদের নাম ছড়িয়ে পড়লে সে আত্মগোপনে চলে যায়। গত ১০ বছরে ওয়ার্ড কমিশনার বিনয় কৃষ্ণসহ প্রায় দেড় ডজন আলোচিত হত্যা মামলার আসামি ছিল ডাকাত শহীদ। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় ইতিমধ্যে তার ফাঁসির রায় হয়েছে। পলাতক অবস্থায় পুরান ঢাকা ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাণ্ডব চালাত।
এ-সংক্রান্ত শতাধিক জিডিও রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ডাকাত শহীদ পরিচিত ছিল। তার বাহিনীতে অর্ধশতাধিক পেশাদার কিলার রয়েছে। সেই সঙ্গে ভারী অস্ত্রসহ শতাধিক অস্ত্রও রয়েছে। দীর্ঘদিন সে ভারতে পলাতক থেকে তার সহযোগীদের দিয়ে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করত। অন্য সন্ত্রাসীরাও তার নামে চাঁদাবাজি করেছে এত দিন।
সরকার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে ডাকাত শহীদ অন্যতম। দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীকে ধরার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেড় দশক ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। আলোচিত এই সন্ত্রাসীর নামে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করা হতো। ভারত ও নেপালে পলাতক থেকেই সে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাত। রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুরান ঢাকায় র‌্যাব তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছিল।
র‌্যাব জানায়, তিন দিন আগে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ডাকাত শহীদ কয়েক সহযোগীসহ বাংলাদেশে আসে। এরপর সড়কপথে ডাকাত শহীদ তার সহযোগীদের নিয়ে পুরান ঢাকায় আসে। এ সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সাদা পোশাকে পুরান ঢাকার সব এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা চালায়। গত রাত সাড়ে ১১টার দিকে র‌্যাব জানতে পারে, লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ডাকাত শহীদ তার সহযোগীদের নিয়ে অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ওই এলাকা ঘিরে ফেলে অভিযান শুরু করে।
সূত্রাপুর থানার পুলিশ জানায়, নিহত ডাকাত শহীদ ও তার সহযোগীর লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

No comments

Powered by Blogger.