উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার-সরকারি জায়গা দখল করে স্থাপনা

সরকারি জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয় উচ্ছেদ করতে হলে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পরিষ্কার বার্তা থাকতে হবে যে, কারও মুখ দেখে এ অভিযান চলবে না। কিন্তু সেখানেই বিরাট ঘাটতি।


সে কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ কাজে আসেনি। পঙ্গু ও শিশু হাসপাতালসংলগ্ন সরকারি জমিতে ৫০০ গজের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুটি অফিস চলছে। বর্তমান সরকারের শুরুতে এ ধরনের দখলদারি কিছুটা হলেও লাগাম টানার চেষ্টা ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা শিথিল হয়ে পড়ে। এখন পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, উত্তর সিটি করপোরেশনে রেলের জমিতে থাকা ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয়ে এক সন্ত্রাসী হামলায় ওয়ার্ড যুবলীগের তিন নেতা গুলিবিদ্ধ হন। এরপর অবৈধ দখল উচ্ছেদে প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশও মুখ থুবড়ে পড়ে।
গতকাল পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযানে দৃশ্যত কোনো সফলতা নেই। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যদি আন্তরিক না হন, তাহলে দখলদারি অব্যাহত থাকবে। কেবল রাজধানী নয়, দেশের অন্যান্য শহরেও সরকারি জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। কিছুদিন ধরে আমরা ফুটপাতে ‘আম-বাণিজ্যের’ ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছি।
৩ জুলাই প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকারি জায়গায় দলীয় কার্যালয়ে শ্রমিক লীগ এগিয়ে থাকলেও এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দিব্যি বলে দিয়েছেন, গত সাড়ে তিন বছরে এমন অভিযোগ তিনি পাননি। তাঁর দায়সারা উক্তি: শ্রমিক লীগের নাম দিয়ে কেউ হয়তো করছে, এর কোনো স্বীকৃতি নেই। ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) সভাপতি তাঁর সংগঠনের কার্যালয় রেলের জমিতে স্বীকার করেও বলেন, ‘আমাদের কোনো অবৈধ অফিস নেই।’ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও একই সুরে এই সমস্যা প্রকারান্তরে অস্বীকার করছেন। এসব প্রমাণ করে যে, সরকারি দল সরকারি জমিতে সাংগঠনের অফিস করাকেই অন্যায় কাজ মনে করে না। তাহলে অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারি বন্ধ হবে কীভাবে? কেবল শ্রমিক লীগ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নয়। এর বাইরেও অনেক সংগঠনের কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে সরকারি জায়গায়। কারা করেছে, কী উদ্দেশ্যে করেছে, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আদর্শ নয়, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থেই এসব সংগঠন ক্ষমতার আশ্রয়ে গজিয়ে ওঠে।
আমরা আশা করব, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জেনেশুনেও না জানার ভান করে এ ধরনের অবৈধ দখল ও চাঁদাবাজির চলতি প্রবণতাকে উসকে দেবেন না। শক্ত হাতে সব অবৈধ স্থাপনা বন্ধ করতে হবে। যেকোনো সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি ও কার্যালয় স্থাপনের বেলায় দলীয় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.