খাল দিয়েঘেরা by ইব্রাহিম খলিলউল্লাহ

আমার দেখা অল্প কিছু জায়গার মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো লাগার দেশ নেদারল্যান্ড...! এ দেশটি হল্যান্ড নামেও পরিচিত, যদিও হল্যান্ড মূলত কেবল নেদারল্যান্ডের একটি ঐতিহাসিক অঙ্গরাজ্যের নাম।বেলজিয়ামপ্রবাসী বন্ধু ইলিয়াস, ইলিয়াসের পোলিশ স্ত্রী এমিলা (আমাদের পাইলট), পোল্যান্ডপ্রবাসী বন্ধু শরীফসহ আমরা যখন আমস্টারডাম পৌঁছাই, তখন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর দুইটা।


আমস্টারডাম পৌঁছানোর পর আমাদের সঙ্গে গাইড হিসেবে যোগ দিল রেজা শাওন। আমস্টারডামে ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলার পর আমরা লাঞ্চ করলাম কেএফসিতে। বেলজিয়ামে কেএফসি না থাকায় প্রায় দুই বছর পর কেএফসিতে খাওয়া হলো।
নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডাম নদীর ওপরে তৈরি করা একটি শহর। আম্ স্ট্যল্ ডাম্ অর্থাৎ আমস্টেল নদীর বাঁধ হচ্ছে আমস্টারডাম। ডাচরা নিজ হাতে গড়েছে তাদের দেশকে। আমস্টারডাম শহরের চরিত্র বুঝতে হলে এককথায় বলতে হয়, এটা হচ্ছে সাইকেল, ক্যানেল (খাল) আর জাদুঘরের শহর। আমস্টারডাম ক্যানেল দিয়ে ঘেরা শহর। ক্যানেলগুলো গিয়ে পড়েছে নর্থ সিতে। ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি ক্যানেল, ৯০টি দ্বীপ ও এক হাজার ৫০০টি ব্রিজ আছে আমস্টারডামে। নেদারল্যান্ডে বসবাসকারী সবারই আছে একাধিক সাইকেল। সাইকেলের জন্য রয়েছে তিন-চারতলা পর্যন্ত পার্কিং। আমাদের গাইড শাওনেরই আছে ছয়টি সাইকেল! এখানে লোকজন শখের বশে সাইকেল খালে ফেলে দেয়। প্রতিবছর খালের পানি পরিবর্তন করতে গেলে পাওয়া যায় অসংখ্য সাইকেল।
নেদারল্যান্ড সমুদ্রপৃষ্টে থেকে নিচের একটি দেশ। সমুদ্র উপকূলে নির্মিত বাঁধ টিকিয়ে রেখেছে নেদারল্যান্ডকে। আমস্টারডাম থেকে ৭৭ কিলোমিটার দূরের ডেনওভারের সেই বাঁধ দেখাতে শাওন আমাদের নিয়ে গিয়েছিল। ডেনওভার যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশের বিলগুলো দেখতে অনেকটাই আমাদের দেশের ছোট ছোট নদীনালার মতো। সমুদ্রের মাঝখানে পাথর ফেলে নির্মাণ করা হয়েছে বাঁধ আর রাস্তা। বাঁধ দেখা শেষে আমরা গেলাম দ্য হেগ। নেদারল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস এই শহরে। দ্য হেগেই অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদর দপ্তর (আইসিসি)। হেগে রয়েছে চমৎকার একটি সি-বিচ। আরও আছে হল্যান্ড ক্যাসিনো। পড়ন্ত বিকালে সি-বিচে আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন হেগপ্রবাসী সফটওয়্যার প্রকৌশলী মইম ভাই। সমুদ্র দেখতে দেখতে খাওয়া হলো বেলজিয়াম থেকে নিয়ে যাওয়া প্রাণ চানাচুর। ফেরার আগে মইম ভাই খাওয়ালেন কফি। মইম ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা উট্টেক গেলাম শাওনকে ড্রপ করতে। শাওনকে ড্রপ করে যখন বেলজিয়ামের উদ্দেশে রওনা দিলাম, ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দুইটার ঘরে। আমরা যখন বেলজিয়াম পৌঁছালাম, ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে...।
 বেলজিয়াম প্রবাসী বন্ধু।
সাবেক সদস্য, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ।

No comments

Powered by Blogger.