ফুটপাত ও সরকারি জায়গা-অবৈধ দখলমুক্ত করা হোক

রাজধানী ঢাকায় এমনিতেই সমস্যার অন্ত নেই। এরপর শুরু হয়েছে নতুন নানা উৎপাত। খালি জায়গা থাকলেই তা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের নামে দখল হয়ে যায়। এলাকাটি ঘিরে চলে নানা অপতৎপরতা। চাঁদাবাজি তো সাধারণ একটি অভিযোগ।


রাজধানীতে রাজনৈতিক দলের অফিসের নামে ফুটপাত ও সরকারি জায়গা দখল করে এ ধরনের স্থাপনা তৈরির অভিযোগ বরাবরই ছিল। ইদানীং এ ধরনের দখলের প্রবণতা বেড়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের অফিস গড়ে তোলার পাশাপাশি সম্প্রতি আমের মেলার নামে ফুটপাত দখল করা হয়েছে। চলছে অবৈধ ব্যবসা। এ সবই করা হয়েছে সরকারি দলের কোনো না কোনো অঙ্গসংগঠনের নামে। এতে সরকারি জায়গা যেমন বেদখল হয়ে যাচ্ছে, এলাকায় বাড়ছে অপরাধ। তেমনি মানুষের হাঁটাচলার জন্য ব্যবহৃত ফুটপাত চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের দখলে।
এমনিতেই রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকার ফুটপাত অনেক আগেই চলে গেছে হকারদের দখলে। এখন বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে সেখান থেকে হকার উচ্ছেদ করা অসম্ভব। কিন্তু আবাসিক এলাকার ফুটপাতও যদি রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট সংগঠন বা ব্যক্তিদের দখলে চলে যায়, তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়ায়। এমনিতেই ঢাকার অনেক ফুটপাত দখল করে রেখেছে সিটি করপোরেশন। মোহাম্মদপুর গজনবী রোড সিটি করপোরেশনের ফুটপাত দখলের বড় প্রমাণ। এর সুযোগ নিয়েছে এলাকার কিছু ব্যবসায়ী। রেসিডেনসিয়াল স্কুল ও কলেজের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে জ্বালানি কাঠের আড়ত, মোটরসাইকেল মেরামতের গ্যারেজ ও রিকশার গ্যারেজ। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার দায়িত্ব যাদের, সেই প্রতিষ্ঠানই যদি দখল করে রাখে, তাহলে অন্যরা মদদ পাবেই। যা হোক, এসব রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের অবৈধ কার্যালয় মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ফুটপাতের অবৈধ দোকান, ব্যানার, তোরণ, ফেস্টুনও সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এসব উচ্ছেদ করা না হলে ঢাকা মহানগর পুলিশ এসব অপসারণে ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর ফুটপাত থেকে আমের মেলা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ সময়ের মধ্যে এসব মেলার দোকানিরা নিজ উদ্যোগে দোকান না সরালে সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মহানগর পুলিশ যৌথভাবে এগুলো অপসারণ করবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে। মহাখালী এলাকায় নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে ফুটপাতের ওপর গড়ে তোলা ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ ও কৃষক লীগের কার্যালয় দুটি উচ্ছেদ করা হয়নি। সোমবার রাত ১০টার পর শুরু হওয়া এ অভিযানে মহাখালী রেলক্রসিং এলাকার আশপাশের কয়েকটি অস্থায়ী স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। রেলক্রসিং-সংলগ্ন ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ ও কৃষক লীগের কার্যালয়ের পাশের একটি রেস্তোরাঁসহ ৮-১০টি দোকান গুঁড়িয়ে দেয় সিটি করপোরেশনের বুলডোজার। কিন্তু যুবলীগ ও কৃষক লীগের কার্যালয় উচ্ছেদ করতে গেলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কার্যালয় দুটি ভাঙতে বাধা দেন। অভিযানকারীদের সঙ্গে তাঁদের বিতণ্ডা হয়। উল্লেখ্য, গত রবিবার দলীয় কোন্দলের জের ধরে যুবলীগের এই কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলায় তিনজন ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হন।
ফুটপাত ও সরকারি জায়গা অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.