গোবেন্দপুরের হক ফাউন্ডেশন পাঠাগার by গাজী মোহাম্মাদ সানাউল্লাহ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যে মোড়টি থেকে বাঁ দিকে গেলে কুমিল্লা শহর তার আরেকটু সামনে হাতের বাঁ পাশের গ্রামটি গোবেন্দপুর। এক পাশে কুমিল্লা শহর, অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এই গ্রামেই কাজী বাড়ির সামনে অবস্থিত একটি পাঠাগার। নানা সময়ের অন্য অনেক পরিচয় ছাপিয়ে এই পাঠাগারটি আজ গ্রামের সবচেয়ে বড় পরিচয়।


প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে গ্রামের সামনের রাস্তা দিয়ে। হঠাৎ করে তাকালে যে কারোরই চোখ আটকে যাবে পাড়াগাঁয়ের এ রকম সুদৃশ্য একটি পাঠাগারের দিকে।
গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে প্রায় ৪ কাঠা জায়গার ওপর এল সাইজে আধা পাকা দালানে পাঠাগারটির অবস্থান। সুরক্ষিত গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে প্রথমেই পড়বে কম্পিউটার রুম। এরপর অফিস কক্ষ। হাতের বাঁ পাশের বিশাল লম্বা ধরনের ঘরটিই পাঠাগার। ঘরে ঢুকলে প্রথমেই চোখে পড়বে 'এখানে যাবতীয় রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ' লেখা একটি সাইনবোর্ড। মাঝখানের দেয়ালে ঝুলছে পাঠাগার ও ফাউন্ডেশনের অন্যতম উদ্যোক্তা মরহুম শহিদুল হকের ছবি। ঘরের দু'দিকে আলমারিতে নানা বিষয়ের বইয়ে ঠাসা। মাঝখানে টেবিল পাতা রয়েছে পড়ার জন্য। টেবিলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বেশ কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা। ধর্ম, সাহিত্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, গল্প, কবিতা ও উপন্যাসসহ বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রায় কয়েক হাজার বই রয়েছে পাঠাগারে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাঠাগারটি পাঠকদের জন্য খোলা থাকে। মহিলা পাঠকদের জন্য বাড়িতে নিয়ে বই পড়ার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।
কথা হলো পাঠাগারের পরিচালক আবদুর রহিমের সঙ্গে। জানালেন, শুধু পাঠাগারই নয় সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্প। এর মধ্যে সাবাহী (সকালের) মক্তব, মহিলাদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ অন্যতম।
পাঠাগারের প্রতি স্থানীয় লোকজনের আগ্রহ ও আবেগ বেশ লক্ষ্য করার মতো। নানা বয়সী পাঠকের দেখা মিলল এখানে। স্কুল-কলেজের ছাত্র থেকে নিয়ে ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ বৃদ্ধজনও রয়েছেন নিয়মিত পাঠকের তালিকায়। মহিলাদের বেশ অংশগ্রহণও দেখা গেল লাইব্রেরির দর্শনার্থী নিবন্ধন খাতায়। পাঠাগারের প্রধান উদ্যোক্তা ও ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কাজী মনসুর-উল হক জানালেন পাঠাগারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা. 'আমরা আপাতত ৪টি কম্পিউটারের ব্যবস্থা রেখেছি পাঠকদের জন্য। সামনে আরও যোগ করা হবে। ইন্টারনেটসহ অন্যান্য সুবিধা দ্বারা এটাকে সম্পূর্ণরূপে একটি ডিজিটাল পাঠাগার করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের; যাতে গ্রামের মানুষ একে শুধু পাঠাগার হিসেবে না নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ইনফরমেশন সেন্টার হিসেবে পেতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন গরিব ও অসহায়দের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবাও প্রদান করা হবে। যেহেতু কারও কোনো সাহায্য ছাড়া সম্পূর্ণ পারিবারিকভাবে এর অর্থায়ন হয় তাই কিছুটা ধীর গতিতেই আমরা কাজ করছি।'
গত ১২ মে পাঠাগার থেকে বের হওয়ার সময় দেখা হলো এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া এ গ্রামের এক কৃতী ছাত্রের সঙ্গে। রেজাল্ট পেয়েই আনন্দের এ সংবাদটি সবার আগে পাঠাগারে জানাতে এলো। সঙ্গে গর্বিত বাবাও। উপস্থিত পাঠকরাও সমস্বরে তাকে অভিনন্দন জানাল। সব দেখে মনে হলো গোবেন্দপুরের এ পাঠাগারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে আগামীর আলোকিত সমাজ। আর এভাবে শিক্ষার আলোতে উদ্ভাসিত হোক সব প্রাঙ্গণে_ এই আমাদের প্রত্যাশা।
gazisanaullah@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.