বাজারদরের চেয়ে সরকারি চিনির দাম বেশি by ফেরদৌস লিপি

খুচরা বাজারে গতকাল মঙ্গলবার চিনি কেজিপ্রতি ৫৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত এক মাস চিনির বাজার স্থিতিশীল। অথচ আজ (বুধবার) থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সংস্থা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) খোলাবাজারে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে চিনি বিক্রি করবে।


রমজানের আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার যখন ব্যবসায়ীদের মুনাফার হার নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে, সেখানে খোদ সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধেই বেশি দামে চিনি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এখনো দাম ঠিক হয়নি বলে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়, আজ থেকে ঢাকায় খোলাবাজারে প্রতিকেজি চিনি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করবে বিএসএফআইসি। রমজান সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকারি সংস্থাটি এ উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ঢাকায় আগে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে সারা দেশে খোলাবাজারে চিনি বিক্রি করবে তারা।
বিএসএফআইসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকশ না করার শর্তে সারা দেশে খোলাবাজারে চিনি বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কারণেই কমতির দিকে থাকা চিনির বাজার রমজানের আগেই আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল দেশের বৃহত্তর পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি দুই হাজার ৩৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে কেজিপ্রতি চিনির পাইকারি মূল্য প্রায় ৪৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায়।
অন্য দিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ডিলার পর্যায়ে ৫০ কেজির এক বস্তা চিনির দাম দুই হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ টিসিবির প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারি হিসেবে সরকারি সংস্থাটির চিনির দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা বেশি।
টিসিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া গত এক মাসের খুচরা তালিকায় চিনির দাম দেওয়া আছে প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। অর্থাৎ খুচরা বাজারের তুলনায় কিছুটা কম। কিন্তু বিএসএফআইসি যদি ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে, তাহলে সরকারি দুটি সংস্থার খুচরা দামের পার্থক্য দাঁড়াবে ৭-৮ টাকা।
দাম বেশির বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির পরিচালক (প্রশাসন, বিক্রয় ও বণ্টন) মোহাম্মদ রমজান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে চিনির মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হবে। টিসিবি সার্বক্ষণিকভাবে বাজার মনিটরিং করছে। রমজানের জন্য টিসিবির কাছে পর্যাপ্ত চিনি মজুদ আছে। ফলে দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।'
টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সংস্থাটির বিভিন্ন গুদামে আট হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন চিনি আছে। পাঁচ হাজার মেট্রিক টন মজুদ আছে বিএসএফআইসির গুদামে। এ ছাড়া আরো ২৫ হাজার টন চিনি ১০ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর এসে পেঁৗছবে।
গত ২৬ জুন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় বাণিজ্য সচিব মোহাম্মদ গোলাম হোসেন জানান, দেশে বছরে ১৪ লাখ টন চিনির চাহিদা থাকলেও সরকারি-বেসরকারি মজুদ ও আমদানি পাইপলাইন মিলে বর্তমানে ১৫ লাখ টন আছে।
এদিকে পাইকারি হিসেবে টিসিবির চিনির দাম বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় ডিলাররা টিসিবির কাছ থেকে চিনি না কিনে বাজার থেকে কিনছেন।
টিসিবির ডিলার মেসার্স শাহজাহান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, 'কম দামে চিনি পাওয়ার জন্য টিসিবি থেকে ডিলারশিপ নিয়েছি। কিন্তু এখন দেখছি টিসিবির চিনির দামই বেশি। ফলে টিসিবি চিনি না কিনে খাতুনগঞ্জ থেকেই চিনি কিনছি।'
সরকারি সংস্থাগুলোর বেশি দামে চিনি বিক্রির সিদ্ধান্ত বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। মোহাম্মদ ইউছুফ নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'গত এক মাস ধরে চিনির বাজার এমনিতেই কমতির দিকে। কিন্তু সরকারি সংস্থার এই সিদ্ধান্তের কারণে চিনির দর আবার বেড়ে যাবে।' তিনি মনে করেন, সরকারি সংস্থাগুলো চিনি আমদানি না করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে খোলাবাজারে বিক্রি করলে চিনির দাম কম থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.