সিরাজগঞ্জে বড় ভূখণ্ড জেগে ওঠার সম্ভাবনা by এনামুল হক

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর গতিপথ পাল্টে ভাঙন রোধের জন্য ২০ কিলোমিটার অংশ খনন করা হয়েছে। খনন করা বালু-মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন ক্লোজার-১ (বাঁধ)। এতে যমুনার পশ্চিম অংশের চ্যানেল বন্ধ হয়ে নদীর মাঝ বরাবর পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং ভাটিতে ভাঙন রোধ হয়েছে বলে দাবি করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।


ক্লোজারটি নির্মাণের ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু, শিল্প পার্কসহ যমুনার আশপাশের এলাকার বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পাউবোর মহাপরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা গত শনি ও রোববার সরেজমিনে ক্লোজার এলাকা পরিদর্শন করেন।
সিরাজগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা যায়, যমুনার গতিপথ পরিবর্তনের লক্ষ্যে ‘ক্যাপিটাল (পাইলট) ড্রেজিং অব রিভার সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই বছর মেয়াদি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে গত ডিসেম্বর থেকে ৪৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর উজানে ১৪ কিলোমিটার এবং ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর ভাটিতে ছয় কিলোমিটার অংশের খননকাজ গত ২০ জুন শেষ হয়। খনন করা বালু-মাটি দিয়ে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ডপয়েন্ট থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার ভাটিতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের মোল্লাবাড়ি এলাকা থেকে নদীর ভেতরে ১ দশমিক ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১০০ মিটার প্রস্থ ভরাট করে একটি ক্লোজার নির্মাণ করা হয়। এতে নদীর পশ্চিম অংশের চ্যানেল বন্ধ হয়েছে। পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদীর মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যার সময় বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তরের গাইড বাঁধ এলাকা থেকে প্রস্তাবিত শিল্প পার্কসহ শহরসংলগ্ন বিয়ারা, পাইকপাড়া, মালসাপাড়া, ঘোনাপাড়া, সাইতানতলী গ্রামগুলোতে প্রতিবারের মতো এবার ভাঙন নেই। বর্তমানে এই অংশের প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানির প্রবাহ না থাকায় পলি-মাটি পড়ে ক্রমেই বিশাল ভূমি জেগে উঠছে। তবে ক্লোজারটি বালু-মাটি দিয়ে ভরাট করায় পানির প্রবাহ ও ঢেউয়ের কারণে এটি ভেঙে বা ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যেই গত তিন দিনে ক্লোজারের ৭০ মিটার অংশে ধস নেমেছে। তবে বালুর বস্তা নিক্ষেপ করে ধস নিয়ন্ত্রণে এনেছেন পাউবোর কর্মীরা।
রোববার ক্লোজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পাউবোর আওতায় শত শত শ্রমিক ধসে যাওয়া স্থানে বালুর বস্তা নিক্ষেপ করছেন। উৎসুক এলাকাবাসী জড়ো হয়ে তা দেখছেন। কথা হয়, সিরাজগঞ্জ শহরের মালসাপাড়ার বাসিন্দা লিটন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, শুকনো মৌসুমে ক্লোজারটি নির্মাণ করায় নদীর পশ্চিম অংশের চ্যানেলটি বন্ধ হয়েছে। ফলে ভাটিতে বিস্তীর্ণ এলাকায় পানির প্রবাহ কমেছে। এসব স্থানে ভাঙন নেই বললেই চলে। এই বাঁধটি স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করে রক্ষা করা গেলে বিশাল স্থলভূমি নদী থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
কথা হয় সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, সদ্য নির্মিত এই ক্লোজারটি সিরাজগঞ্জবাসীর জন্য আশীর্বাদ। পানির গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমানে অনেক বেশি প্রস্থ নিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় খনন করা স্থানে জমা হওয়া পলিগুলো খনন করে হার্ডপয়েন্টসহ ক্লোজারের দক্ষিণ অংশে ভরাট করা হবে। এতে নদী থেকে সাড়ে আট বর্গকিলোমিটার স্থলভাগসহ আশপাশের অনেক জমি স্থায়ী জমিতে পরিণত করা সম্ভব হবে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুজয় চাকমা বলেন, ক্লোজার নির্মাণ করায় বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা থেকে হার্ডপয়েন্ট পর্যন্ত ভাঙন রোধ হয়েছে। সেখানে এখন পলি পড়ে জমি উঁচু হচ্ছে। ফলে নদীর তীরে আরেকটি শিল্পশহর গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
পাউবোর মহাপরিচালক কে এ এম শহীদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষামূলক নদী খনন প্রকল্পের আওতায় এই ক্লোজার-১ নির্মিত হয়েছে। পানির গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় এটি স্থায়ী করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটি স্থায়ী হলে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ডপয়েন্ট চিরদিনের জন্য আশঙ্কামুক্ত হবে।

No comments

Powered by Blogger.