অদম্য মেধাবী by কনক বর্মণ

প্রতিবছর এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পর আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে এমন কিছু অদম্য মেধাবীর কথা জানতে পারি যা আমাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জোগায়। অনুপ্রেরণা জোগায় এগিয়ে যাওয়ার। সারাদেশের সংখ্যার তুলনায় পত্রিকায় প্রকাশিত সংখ্যা হয়তো খুবই নগণ্য।


তারপরও, এই সংখ্যা দিয়েই আমরা খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারি সারাদেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের অসংখ্য মেধাবীর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে। এ বছর অর্থাৎ ২০১১-এর এসএসসি পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পরও এমনি কিছু সংগ্রামী মেধাবী মুখ সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি পত্রিকার পাতা থেকে। যারা জন্মের পর থেকেই প্রতিটি মুহূর্ত লড়াই করে চলেছে জীবনের সঙ্গে তবু কখনও হাল ছাড়েনি পড়াশোনার। পিছু হটেনি কেউ, প্রতি মুহূতের বেঁচে থাকার লড়াই থেকে।
দৈনিক সমকাল এবং দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত এমনি কতগুলো সংগ্রামী নাম পিরোজপুরের জাকির হোসেন; পটুয়াখালীর দিলীপ চন্দ্র দাস, মরিয়ম জাহান সুমি; নীলফামারীর শাহজাহান, মোঃ শাহজাহান ইসলাম; কুড়িগ্রামের মাইদুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, রানা সরকার; রংপুরের আবদুল্লাহ আল মামুন, মোস্তাফিজ; বরিশালের মোজাম্মেল হক, সুমন সরকার; সুনামগঞ্জের কৃপেশ চন্দ্র দাস; দিনাজপুরের মোরশেদা খাতুন; ময়মনসিংহের আফরোজা খানম সুমি; সিরাজগঞ্জের নাসির, গোপাল চন্দ্র পাল, সাজিদুল ইসলাম; নড়াইলের নূর মোহাম্মদ, হামিম মোল্লা; ফরিদপুরের ফাবিয়া রাইয়ান; চুয়াডাঙ্গার আলী হোসেন; জয়পুরহাটের কুলসুম আক্তার; সিলেটের মাহতাব আহমদ; বগুড়ার সুমন কুমার সাহা ও কিশোরগঞ্জের তাপস চন্দ্র সাহা।
রিকশা চালিয়ে, দিনমজুরের কাজ করে, ছাত্র পড়িয়ে, নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে, খালে-বিলে মাছ ধরে, অন্যের বাড়িতে কাজ করে, বুট-বাদাম বিক্রি করে, সেলাই মেশিন চালিয়ে, বাবুচির কাজ করে, মুদি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে, কখনও দু'বেলা খেয়ে, কখনওবা একবেলা আবার এমনও দিন গেছে খাবার না পেয়ে শুধু পানি খেয়ে তারা বেঁচে থাকার লড়াই করেছে, চালিয়ে গেছে পড়াশোনা। এত কিছুর পরও তারা মনোবল হারায়নি কখনও। আর এই মনোবলের কারণেই এবারের এসএসসিতে তারা পেয়েছে সবাই জিপিএ-৫। ফলাফলে খুশি এই সংগ্রামীরা। খুশি পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং এলাকার মানুষ। খুশি আমরাও। ফলাফলে খুশি হলেও সেটা খুব বেশিক্ষণ তাদের আনন্দে ভাসিয়ে রাখতে পারেনি। পারেনি কারণ, সামনের পুরোটা পথ যে অনিশ্চিত। আগামী দিনের উচ্চশিক্ষার খরচের চিন্তায় এখন সকলের চোখে-মূখে হতাশার ছাপ। ওরা কেউ জানে না কীভাবে চলবে আগামী দিনের পড়াশোনার খরচ!
আমরা কি পারি না উচ্চশিক্ষার খরচের নিশ্চয়তা দিয়ে ওদের চোখ-মুখ থেকে হতাশার সেই ছায়া দূর করতে? সমাজে অনেক মানুষ আছেন যারা একটু মুখ তুলে চাইলেই পারেন একজন ছাত্র কিংবা একজন ছাত্রীর পড়াশোনার খরচের দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে ওইসব অদম্য মেধাবীর উচ্চশিক্ষার পথ নিশ্চিত করতে। ওরা আমাদের দেশের সম্পদ, ওদের উচ্চশিক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারলে একদিন ওরাও দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। ভূমিকা রাখতে পারে একটি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ার কাজে। সর্বোপরি হাসি ফোটাতে পারবে অভাব-অনটনে জর্জরিত পরিবারের মুখে। সমাজের বিত্তবানদের কর্তব্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে অসহায় অদম্য মেধাবী, দেশের ভবিষ্যৎ গড়ায় অবদান রাখা। একটু সহযোগিতা পেলে ওরা একেকজন হয়ে উঠবে উজ্জ্বল নক্ষত্র। যার আলোতে আলোকিত হবো আমরা সবাই। আলোকিত হবে আমাদের ভবিষ্যতের দিনগুলো। অন্তত একজন করে ছাত্র কিংবা ছাত্রীর পড়াশোনার ব্যয় বহনের দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চিত করুন তাদের ভবিষ্যৎ উচ্চশিক্ষার পথ।
 

No comments

Powered by Blogger.