পরিবেশ অলিম্পিয়াড ২০১২-এসো, পরিবেশ বন্ধু হই

কাচের দরজার ওপাশ থেকেই চোখে পড়ছে সারি সারি টেবিল। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, প্রতিটি টেবিলের সামনে বিশাল একেকটা লাইন। একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে বোঝা গেল ব্যাপারটা কী। ৩০ জুন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি আয়োজন করল পরিবেশ অলিম্পিয়াড।


এ আয়োজনের মূল সুর ছিল, ‘পরিবেশ রক্ষাই সবার সুরক্ষা’।
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো এ প্রতিযোগিতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, হলিক্রস কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশসচেতন শিক্ষার্থীদের আলাপচারিতায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিশাল ক্যাম্পাস মুখরিত। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পর হলো উদ্বোধনী পর্বের অনুষ্ঠান। এর পরপরই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা বসে পড়লেন পরীক্ষা দিতে। পরিবেশবিষয়ক সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে ৫০ মিনিটের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার পর কলেজ পর্যায় থেকে ১১ জন ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে ১৫ জনকে নির্বাচন করা হলো। এবার পালা উপস্থিত বক্তৃতার। একেকজনে নাম ডাকা হচ্ছে আর লটারির দুর্দান্ত বিষয় নির্ধারক ভাগ্য পরীক্ষার পর নির্বাচিতদের উপস্থাপন করতে হচ্ছে সাম্প্রতিক সেই বিষয় নিয়ে তাঁদের বক্তব্য।
ফলাফল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে যখন চাপা উত্তেজনা বিরাজমান, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইজাজকে প্রশ্ন করা হলো, ‘কী মনে হয়, পুরস্কার পাবেন তো?’ প্রশ্ন শুনে একগাল হেসে তিনি উত্তর দেন, ‘পরিবেশ অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করাটাই আনন্দের। আর যদি পুরস্কার পাই সেটা হবে বাড়তি পাওয়া।’
অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্তটি এল ‘পুরস্কার প্রদান’। কলেজ পর্যায় থেকে পাঁচজন ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে সাতজনকে দেওয়া হলো চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার। আর সর্বোচ্চ পুরস্কার, চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস বিজয়ী হলেন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফা ইসহাক এবং কলেজ পর্যায়ে হলিক্রস গার্লস হাইস্কুলের সানজিদা রশিদ। তাঁদের সবার হাতে তুলে দেওয়া হয় সনদ ও ক্রেস্ট। সেই সঙ্গে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস বিজয়ীর ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং হলিক্রস কলেজকে পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
‘বলুন তো, কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আগে কী করা প্রয়োজন?’ উপস্থাপক বিধান পালের এই প্রশ্নে মিলনায়তনজুড়ে গুঞ্জন উঠল। কেউ বললেন বিশ্বাস, ভালোবাসা, কেউ আবার বললেন, সুখে-দুঃখে পাশে থাকা ইত্যাদি। উঁহু, আসলটা এখনো বলা হলো না। সবাই চিন্তিত। হঠাৎ উঁচু করে হাত তুলে একজন বললেন, বন্ধু সম্পর্কে জানা। এবার মিলনায়তনজুড়ে করতালি। ঠিক, ঠিক। পরিবেশের বন্ধু হওয়ার জন্য আগে জানতে হবে পরিবেশকে। আর এর জন্যই পরিবেশ অলিম্পিয়াডের আয়োজন।
‘পরিবেশবিনাশী সব ধরনের কাজ থেকে বিরত থেকে পরিবেশ রক্ষায় আমরা নিজেরা নিজেদের আবস্থান থেকে সাধ্যমতো উদ্যোগ নিতে সচেষ্ট থাকব।’ তারুণ্যের এই অঙ্গীকারের মধ্য দিয়েই শেষ হলো পরিবেশ অলিম্পিয়াড ২০১২।

No comments

Powered by Blogger.