মণিহারে চাঁদাবাজি-সংস্কৃতির অঙ্গনে কালো ছায়া

চাঁদাবাজির কারণে যশোরের 'মণিহার সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে'_ এমন খবর দিয়েছেন সমকালের যশোর সংবাদদাতা। সীমান্ত শহরে প্রায় তিন দশক আগে বাংলাদেশের বৃহত্তম এ সিনেমা হলটি চালু হয়েছিল। বিনোদনের পাশাপাশি তা হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
হল এবং আশপাশের এলাকা এরপর থেকে মণিহারের নামেই পরিচিত হয়ে ওঠে। বাসস্ট্যান্ডের নামও মণিহার। যেমন ঢাকায় 'গুলিস্তান'। প্রতিবেদনে বলা হয়, 'কয়েকজন মাস্তানের জন্য প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হওয়া জাতির জন্য লজ্জার।' পরিচ্ছন্ন ছবির প্রদর্শনী হয় যে সিনেমা হলটিতে, সেখানে কীভাবে অশুভ শক্তির হানা, এ প্রশ্ন স্বাভাবিক। এর পৃষ্ঠপোষকই-বা কারা? মালিক পক্ষ অভিযোগ করেছে যে, চাঁদার দাবিতে সিনেমা হলটিতে এক দফা ভাংচুর করা হয়েছে। ১৫ জুলাই তৌফিকুল আজম সাফিনের নেতৃত্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী হলের ক্যাফেতে হামলা ও লুটপাট চালায়। পরের দিনও তারা হলে প্রবেশ করে উৎপাত করে। কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করা হলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি_ এমনই দাবি মালিক পক্ষের। দেশের নানা স্থানে পুলিশ ও সন্ত্রাসী শক্তির যোগসাজশের কথা শোনা যায়। বিশেষ করে সন্ত্রাসীরা শাসক দলের সঙ্গে সম্পর্কিত হলে পুলিশ এক পা এগোয় তো সাত পা পেছায়। কখনও কখনও তারা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকেই হেনস্তস্না-হয়রানি করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। যশোরের ক্ষেত্রেও কি সেটাই ঘটেছে? আশা করব যে প্রশাসন এ ব্যাপারে তৎপর হবে এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সিনেমা হলটি বন্ধ হওয়ায় সাধারণভাবে জনমনে এবং বিশেষভাবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবেই। সরকারকে দাঁড় করানো হবে কাঠগড়ায়। সরকার কি এ সমস্যা সম্পর্কে সচেতন? সন্ত্রাসীদের দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েই কেবল তারা এ অভিযোগ খণ্ডন করতে পারে। তবে সিনেমা হলটি রমজান মাসে বন্ধ রাখা সম্পর্কে ভিন্ন একটি মতও রয়েছে। সাধারণভাবে এ সময়টিতে হলে দর্শক সংখ্যা কম থাকে। মণিহারও ব্যতিক্রম নয়। অতীতে এ কারণে এ সময়ে হলটি কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মালিক পক্ষ এ বিষয়টি সামনে নিয়ে আসতে চায় না বলে দায় চাপায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ওপর। এটা যথার্থ কি-না সে বিষয়ে প্রশাসন ও সাংস্কৃতিক মহল অনুসন্ধান চালাতে পারে। যদি দেখা যায় যে, মালিক পক্ষ উদোর পিণ্ডির বুধোর ঘাড়ে চাপাতে চাইছে তবে তার বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। তবে এমনকি এ অভিযোগ সঠিক হলেও সন্ত্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি কোনোভাবেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। তারা সিনেমা হলে হামলা চালিয়েও কীভাবে নির্বিঘ্নে থাকতে পারে, সে জবাব যশোরের প্রশাসনকে দিতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.