সব শর্ত মানা হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে-০ যে কোন সময় আবুল হোসেনের পদত্যাগ ০ নয়া প্রেসিডেন্টের মন গলাতে এডিবি জাইকাকে দিয়ে তদ্বির by হামিদ-উজ-জামান মামুন

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য বহুমুখী পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে সরকার। শীঘ্রই একটি ইতিবাচক ফল আসবে বলেও সরকার আশা করছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দেয়া সব শর্তও পূরণ করা হবে বলেও জানা গেছে।


আগামী অক্টোবরে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কানাডা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে কী আছে সে বিষয়ে বিশদ জানতে কানাডায় যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তাদের। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রবিবার বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকার চারটি বিকল্প নিয়ে এগোচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান এবং প্রথমটিই হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের বাতিল ঋণচুক্তি পুনর্বহাল। দ্বিতীয়টি হলো অন্য তিন দাতা সংস্থা এবং নতুন কাউকে নিয়ে অগ্রসর হওয়া, তৃতীয় পথ পিপিপির আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং সর্বশেষ বিকল্প প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে যদি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতায় আসা সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে আগামী ১২ থেকে ১৪ অক্টোবর টোকিওয় অনুষ্ঠেয় বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় শুধু পদ্মা সেতু ইস্যুকেই গুরুত্ব দেয়া হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে এ বৈঠকে অংশ নেবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থ সচিব ফজলে করিম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ ও ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আরস্তু খান।
বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের নানা পর্যায়ে তৎপরতার অন্যতম অংশ হচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) প্রেসিডেন্টকে দিয়ে বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সঙ্গে আলোচনা করা। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, জাইকার প্রেসিডেন্ট এখন ওয়াশিংটনে আছেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আমি তাঁকে পদ্মা সেতুর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার অনুরোধ জানিয়েছি।
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের বিকল্প পরিচালক কাজী আমিনুল ইসলামের মেয়াদ না বাড়িয়ে সেখানে নতুন বিকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক অর্থ সচিব ড. মোহাম্মদ তারেককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী ১৪ আগস্ট তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প পরিচালক হিসেবে যোগদান করবেন। কাজী আমিনুল ইসলামের চাকরির মেয়াদ না বাড়ানোর কারণ হিসেবে জানা গেছে, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ পদে নিয়োগ পান। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবার তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি করে। কিন্তু পদ্মা সেতু নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কাটাতে তাঁর কার্যকর ভূমিকা না থাকায় মেয়াদ বৃদ্ধি আবেদন করলেও সরকার তা না বাড়িয়ে নতুন বিকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে।
পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাংকের সব সুপারিশই সরকারের পক্ষ থেকে মেনে নেয়া হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যেই সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী এবং বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করেছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর বাদ পড়ার খবরই জানতে পেরে আগেভাগেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেন। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারকে দেয়া প্রস্তাব এবং সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক পরামর্শ দিয়েছিল যে সরকার চারটি পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু সরকার চারটির মধ্যে দুটি করতে পারেনি। প্রথমত দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি বিশেষ যৌথ তদন্ত ও বিচারিক টিম গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, যাতে দুদক সম্মতিও দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত সরকার একটি বিকল্প প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থায় সম্মত হয়েছিল যেখানে সহযোগী অর্থায়নকারীদের জন্য স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অধিকতর তদারকির সুযোগ ছিল। তৃতীয়ত দুদককে বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি বাইরের প্যানেলের কাছে তথ্য দেয়ার এবং প্যানেলকে তদন্ত প্রক্রিয়ার পর্যাপ্ততা মূল্যায়নের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দুদক বাইরের প্যানেলের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করার কোন আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখার বিষয়টি মেনে নেয়নি। সব শেষে সরকার বাংলাদেশী আইনের আওতায় থাকা সত্ত্বেও তদন্ত চলাকালে সরকারী দায়িত্ব পালন থেকে সরকারী ব্যক্তিবর্গ (আমলা ও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত) ছুটি দিতে রাজি হননি। চারটি ব্যবস্থার মধ্যে দু’টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুর জন্য ঋণ সহায়তা বাতিল করা ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না।
অন্যদিকে গত মাসের শেষ দিকে কানাডার মাউন্টেন পুলিশ বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু তারা বলেছিল দুদকের কাছে কোন তথ্য গোপন থাকে না এ অজুহাতে শেষ পর্যন্ত আসেনি। এ প্রেক্ষিতে অধিকতর তদন্তের জন্য দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী এবং মীর্জা জাহিদুল আলমসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা কানাডায় যেতে পারেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর তেরেসা খোর সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই বৈঠকে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টরের মতামতের আলোকে অর্থমন্ত্রী মনে করেন, বিশ্বব্যাংকের সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া না হলে সহ-অর্থায়নকারী হিসেবে এডিবিও বিশ্বব্যাংকের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ম্যানিলায় এডিবির সদর দফতর ও জাপান সফর করবেন অর্থমন্ত্রী। সফরে তিনি এডিবি ও জাইকা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে আরও এক মাস সময় চাইবেন। সরকার এডিবির সীমাবদ্ধতা অনুধাবন করতে পারে। এর পরও বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পদক্ষেপ নিতে এডিবিকে অনুরোধ জানানো হবে।
সূত্র জানায়, ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার দেয়ার জন্য ঋণচুক্তি করলেও পরে দুর্নীতির অভিযোগে তা বাতিল করে। এ ছাড়া এডিবি ৬১ কোটি ৫০ লাখ, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল।

No comments

Powered by Blogger.