সুন্দরবন বাঁচাতেই হবে by অলিউর রহমান ফিরোজ

বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেখা দিচ্ছে নানা বিপর্যয়। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণ মূলত ধনী দেশগুলোর গ্যাস নিঃসরণ। তাছাড়া রয়েছে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়া। ধনী দেশগুলোর কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হয় আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে।


প্রকৃতির রুদ্ররোষের কবল থেকে গরিব রাষ্ট্র্রগুলোকে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতার কথা বলা হলেও তারা তাদের সেই প্রতিশ্রুত পূর্ণ অর্থ দিচ্ছেন না। এতে আমাদের দেশসহ আরও কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে জলবায়ুর বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। আমাদের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৪ কোটি মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ত পানি প্রবেশ, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিকম্পের মতো চরম ঝুঁকির মুখে বসবাস করছে। ফলে উপকূলীয় এলাকার মানষের জীবনধারায় নেমে এসেছে বিপর্যয়। মালদ্বীপ রাষ্ট্রটি আগামী পাঁচ দশকের মধ্যে সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের ধনী দেশগুলো একাধিকবার বৈঠকে বসলেও তাতে কাঙ্ক্ষিত সাড়া তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে কপ-১৫ বৈঠক হলেও সেখানে তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যেই তা শেষ করতে দেখা যাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতায় ইতিমধ্যে আমাদের দেশের ওপর দিয়ে বড় ধরনের বিপর্যয় বয়ে গেছে। সিডর এবং আইলা ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলাকে। সে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
আমাদের সুরক্ষা দিতে সুন্দরবনের রয়েছে বড় ধরনের অবদান। বনটি কাঠ পাচারকারীদের কবলে পড়ে এখন কাঠশূন্য হতে বসেছে। বিশ্বখ্যাত এ সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত হলে বিশ্ব মানুষের কাছে এর কদর বেড়ে যেত বহুগুণে এবং পর্যটন খাতের জন্য প্রচারের জন্য আলাদা করে কোনো চিন্তার প্রয়োজন দেখা দিত না। বিশ্বখ্যাত এ ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের গুরুত্ব এবং তার অবদান অনস্বীকার্য। বনের ভেতর মধু আহরণকারী মৌওয়ালি এবং বাওয়ালি মধু আহরণের সময় মৌচাক থেকে মৌ পোকা সরানোর জন্য আগুন ধরিয়ে ধোঁয়ার কাজটি সম্পন্ন করেন, সেখান থেকেও আগুন ধরার বিষয়টি নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনের পচাকোরালি, চাঁদপাই রেঞ্জের নাপিতখালী, চাঁদপাই, শরণখোলা এলাকায় সবচেয়ে বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। চলতি বছর বনের ভেতর চারবার আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটলেও আগুন নিয়ন্ত্রণের নেই কোনো বড় ধরনের সরঞ্জাম। মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি দিয়ে চলে এ মূল্যবান সম্পদ রক্ষার্থে ফায়ার সার্ভিসের প্রচেষ্টা।
২০০৯ সালে আইলা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানলে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পুরো এলাকা। আর সে আঘাতের বড় ঝাপ্টা সুন্দরবন আগে বুক পেতে নিয়েছিল। নইলে আমাদের উপকূলীয় এলাকা এখন যতটুকু রয়েছে তারও কোনো চিহ্ন পাওয়া যেত না। ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে সমুদ্রের নোনা পানি বনের ভেতর ছড়িয়ে পড়লে পুরো বন ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়। আর এ কারণে বন থেকে ৩১৪ প্রজাতির গাছ এবং ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বন থেকে হারিয়ে গেছে। এ বছর পরপর চারবার আগুন লাগার কারণে এ পর্যন্ত বনের ৪০ একর বনভূমি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা। ১৯৭৬ সালের বন ব্যবস্থাপনা আইনের প্রয়োগবিধি কার্যকরের মাধ্যমে বনভূমি রক্ষা করা একান্ত জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে সর্বাগ্রে।
মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার
mdferozcc@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.