অভিযোগ খণ্ডাতে সংসদকেই উদ্যোগী হতে হবে-মার্কিন কংগ্রেসের শুনানি

মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনের শুনানিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি বোধগম্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, র‌্যাব ‘দায়মুক্তির’ পাশাপাশি অস্বীকার ও ঔদাসীন্যের যে নীতি অনুসরণ করে চলেছে, তার অবসান হবে কি না।


এর সদুত্তর সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে আমরা আশা করি।
গুম, হত্যা, নির্যাতন ও র‌্যাবের ভূমিকার বিষয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা বহুল আলোচিত। ‘র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তে আমেরিকানদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পাওয়া লোকজন আছেন। প্রয়োজনে তাঁরা তদন্ত করতে পারেন’ শুক্রবার র‌্যাব মুখপাত্রের এই বক্তব্য কৌতূহলোদ্দীপক বটে। বিষয়টি অনেকটা এমন যেন মার্কিন সরকার যেহেতু র‌্যাবকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, তাই তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ও তাদের। র‌্যাবের গুলিতে পা হারানোর ঘটনায় অনেকেই শঙ্কিত হতে পারেন যে ক্ষমতাসীনেরা তা স্বীকার করছেন না। এই অস্বীকারের সংস্কৃতিই যে প্রতিকারের প্রধান অন্তরায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিনিধি জন শিফটন কংগ্রেসের শুনানিতে সাক্ষ্য দেন। তিনি বাংলাদেশের ‘সরকারি কর্মকর্তাদের’ মুখে তাদের বিডিআর বিদ্রোহসংক্রান্ত মানবাধিকার প্রতিবেদনকে ‘পাশ্চাত্যের ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। এবং তাদের সহায়তাকারী স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। এটা গুরুতর অভিযোগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির উচিত হবে এটা খতিয়ে দেখা।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজীনা বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক রপ্তানি যেসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করছিলেন, মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে সেটাই সমর্থিত হয়েছে। শুনানিতে বলা হয়েছে, আমিনুল হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত হবে না। এ ছাড়া পোশাকশিল্পে ঘন ঘন ধর্মঘটের কারণ হিসেবে বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম মজুরি প্রদানকারী দেশের অন্যতম এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে সমগ্র এশিয়ায় বিপজ্জনক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়ার নয়। সরকারকে অবশ্যই এসব সমস্যার সমাধানে মনোযোগী হতে হবে।
শুনানিতে বাংলাদেশের সুশীলসমাজ, এনজিও ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে ‘জব্দ করার’ অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত বিদেশি অনুদানসংক্রান্ত আইনটিকে দেখা হয়েছে। এখন এর প্রতিকার হলো জনমত যাচাই সাপেক্ষে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আইনটি পাস হতে দেওয়া।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে মানবিক অবস্থান গ্রহণের জন্য শুনানিতে যে আকুতি প্রকাশ পেয়েছে তার সঙ্গে আমরা একমত। তবে জন শিফটন তাঁর লিখিত বিবৃতিতে চলতি উদ্বাস্তু স্রোতকে যেভাবে শুধু আরাকানের সাম্প্রতিক ‘জাতিগত সহিংসতার’ বাতাবরণে দেখেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন, তার প্রতিবাদ জরুরি ছিল ওই শুনানিতে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করি, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরাকানের পদ্ধতিগত এথনিক ক্লিনজিংয়ের নিন্দা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং বাংলাদেশকে একচোখা নীতির ভিত্তিতে সবক দিয়ে চলেছে।
তবে কংগ্রেস একটি আইনসভা। বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে অভিযোগ খণ্ডাতে হলে এর সঙ্গে আমাদের আইনসভার বিশ্বাসযোগ্য সংলাপ দরকার।

No comments

Powered by Blogger.