তামাক চাষে নারীর স্বাস্থ্য বিপর্যয় by সিরাজ প্রামাণিক

তামাক চাষ, পাতা শুকানো, তামাক বাছাই, তামাকজাত সামগ্রী উৎপাদনসহ সব প্রক্রিয়ার সঙ্গে কুষ্টিয়ার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী শ্রমিক জড়িত। এসব প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ সংযোগ থাকার কারণে নারীরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এই স্বাস্থ্য ক্ষতি সম্পর্কে তারা মোটেই সচেতন নন।


তারা শুধু জানেন ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু কী ক্ষতি হচ্ছে সে ব্যাপারে তারা আজও অন্ধকারে। দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় তাদের তামাক পাতার সংস্পর্শে থাকতে হয়। যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ছাড়া দীর্ঘক্ষণ তামাক পাতা নাড়াচাড়া করার ফলে তাদের হাতে এক ধরনের কালো আবরণ পড়ে, যার স্বাদ মারাত্মক তিতা। ১০-১২ বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরও এই তিতা স্বাদ দূর হয় না। ফলে ভাত খেতে তাদের চামচ ব্যবহার করতে হয়। এভাবে তামাক পাতার সংস্পর্শে থাকার কারণে তারা হাত ও পায়ের পচন রোগসহ (বার্জেস রোগ) নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তামাক বাছাই ও বাইন্ডিং এবং বিড়ি কারখানার শ্রমিক হিসেবেও কাজ করছেন অগণিত নারী ও শিশু।
তামাক চাষে বেশি বেশি কীটনাশক ও রাসায়নিক সারসহ নানা রকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এগুলো সরাসরি মানবদেহের ক্ষতিসাধনসহ পরিবেশ দূষিত করছে। নদী, খাল বা অন্যান্য জলাশয়ের পাশে অবস্থিত তামাক ক্ষেতে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক পানিতে মিশে পানি দূষিত করছে। একইভাবে বায়ুদূষণসহ অন্যান্য দূষণ ঘটছে প্রতিনিয়ত। কয়েক বছর ধরে তামাক চাষ হচ্ছে এমন জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়াতে হচ্ছে। এভাবে একদিন এসব জমি উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। তামাক চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, এক ঘর তামাক পাতা শুকাতে সাধারণত ৩০ মণ বা তার বেশি কাঠ পোড়াতে হয়। এভাবে শুধু কুষ্টিয়া এলাকায়ই প্রতিবছর কয়েক লাখ টন কাঠ পোড়ে। তামাকের জন্য হাজার হাজার গাছ কাটা হচ্ছে, বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তামাক চাষের কারণে কুষ্টিয়ার পরিবেশ দিন দিন ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
খোকসা, কুষ্টিয়া
 

No comments

Powered by Blogger.