হুমায়ূন আহমেদের জন্মস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি

জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্মস্থান নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ পত্রিকা, টেলিভিশন, ব্লগ ও ফেসবুক স্ট্যাটাসে ভুল করে উল্লেখ করা হচ্ছে তার জন্মস্থানটি। ফলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন পাঠক ও দর্শকরা।


বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুল করে বলা হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম নেত্রকোনার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে। মোহনগঞ্জের কুতুবপুরও বলা হচ্ছে কোন কোনটিতে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলা হচ্ছেÑ তাঁর জন্ম মোহনগঞ্জের শেখ বাড়িতে। ‘কুতুবপুর’ এবং ‘শেখবাড়ি’ দুটি ভিন্ন জায়গা। উপজেলাও আলাদা। তাই একেকটিতে একেকভাবে বলার কারণেই পাঠক ও দর্শকমনে এই বিভ্রান্তির কারণ।
প্রকৃত সত্য হচ্ছেÑ জননন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের জন্ম নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শেখ বাড়িতে। এটি তার নানার বা মামার বাড়ি। এখানেই ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে মা আয়েশা আক্তার খাতুনের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হন হুমায়ূন আহমেদ। ‘আমার ছেলেবেলা’ গ্রন্থে তিনি জন্মস্থানের নাম উল্লেখ না করলেও যে বর্ণনা দিয়েছেনÑ তা তাঁর নানার বাড়িরই। এতে তিনি লিখেছেনÑ ‘....শিশুর কান্নার শব্দ আমার নানাজানের কানে যাওয়ামাত্র তিনি ছুটে এসে বললেন, ছেলে না মেয়ে ? ডাক্তার সাহেব রহস্য করার জন্য বললেন, মেয়ে। নানাজান তৎক্ষণাৎ আধমণ মিষ্টি কিনতে লোক পাঠালেন। যখন জানলেন মেয়ে নয় ছেলেÑ তখন আবার লোক পাঠালেনÑ আধমণ নয়, এবার মিষ্টি আসবে একমণ।’
হুমায়ূন আহমেদের ছোট মামা মোহনগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুন্নবী শেখও জনকণ্ঠকে বলেছেন, ‘যাঁরা কুতুবপুর বলছেন তাঁরা ভুল করছেন। প্রকৃত সত্য হচ্ছেÑ তাঁর জন্ম মোহনগঞ্জের দৌলতপুরের শেখ বাড়িতে। হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানও বলেছেনÑ হুমায়ূন আহমেদের জন্ম তাঁর নানার বাড়িতেই, অর্থাৎ মোহনগঞ্জের দৌলতপুর গ্রামে।
কুতুবপুর হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের পৈত্রিক নিবাস। দাদার বা বাবার বাড়ি। নিজ গ্রাম। পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর চাকরি ও নানা সময় বদলির কারণে কুতুবপুর এবং দৌলতপুরÑ এ দু’জায়গাতেই শৈশব-কৈশোরের অনেক দিন কেটেছে হুমায়ূনের। দাদার বাড়ি এবং নানার বাড়ির বিস্তর বর্ণনা দিয়ে ‘আমার ছেলেবেলা’য় তিনি লিখেছেনÑ ‘আমার শৈশবের সবচেয়ে আনন্দময় সময় হচ্ছে এই দু’জায়গায় বেড়াতে যাওয়া। প্রতি দু’বছর পর পর একবার তা ঘটত। আমার মনে হতো, এত আনন্দ, এত উত্তেজনা সহ্য করতে পারব না। অজ্ঞান হয়ে যাব। আমরা ছুটিতে যাচ্ছি। ছুটিতে যাচ্ছি। ছুটি!’
আর কোনদিন নানার বাড়ি বা দাদার বাড়িতে যাওয়া হবে না তাঁর। জীবনের শেষ ছুটিতে চলে গেছেন তিনি। চলে গেছেন ‘অনন্ত নক্ষত্র বীথির দেশে’। মিশে গেছেন হাওড়ের লিলুয়া বাতাসে। তাঁর কারণে ধন্য আজ দৌলতপুরের শেখবাড়ি। ধন্য কুতুবপুরের মৌলভীবাড়ি। ধন্য কেন্দুয়া, মোহনগঞ্জ তথা নেত্রকোনার মাটি।

No comments

Powered by Blogger.